বিডিআর বিদ্রোহের ৭ বছর

“কেমন আছো, সন্তানরা কেমন আছে”

‘আফিসারদের কেন হত্যা করা হলো? কেন সেটা জনতে পারবো না? এভাবে মানুষ মানুষকে মারতে পারে না। কেন মারলো আজও বুঝতে পারছি না।’ বুধবার বিকেলে কান্না জড়িত কণ্ঠে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআপি লাউঞ্জে এভাবেই বলছিলেন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইনশাদ ইবনে আমিনের স্ত্রী ড. রোয়েনা মতিন। ‘পিলখানা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভায়’ কথা বলছিলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। উপস্থিত ছিলেন পিলখানায় নিহত সেনা পরিবারের সদস্যরা।

আলোচনা সভা চলাকালে তাদের কয়েকজনকে কাঁদতে দেখা যায়। কেউ কেউ হৃদয় স্পর্শ করা বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা শেষে শহীদদের স্মরণে প্রেসক্লাবের সামনে অলোর মিছিল করা হয়।

সুলতানা কামাল শহীদ পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই ক্ষত কোনোদিন শুকাবে না। তিনটি তদন্ত কমিটি হয়েছে কিন্ত তথ্য জানা যায়নি। আমরা তদন্ত করতে পারিনা নাকি প্রকাশ করতে চাই না। এটা তাদের প্রশ্ন থেকে যায়।’

নিহত কর্নেল কুদরত এলাহীর বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও এতো বড় সেনা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। কী অপরাধ ছিল তাদের? কেন তাদের হত্যা করা হলো? কারা পরিকল্পনাকারী? ৮৪৬ জন আসামির বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর রায় ঘোষণা করা হলো। ১৫২ জনের ফাঁসি হলো। খালাস পেলেন ২৭৭ জন। এটা আপিলযোগ্য। আমার জীবদ্দশায়তো নয়ই তার স্ত্রী সন্তানরাও এই বিচার দেখে যেতে পারবে কি না সন্দেহ আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে স্ত্রী তার স্বামী হারিয়েছে, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছে, যে পিতা তার সন্তান হারিয়েছে তারা বুঝে কষ্টটা কতো।’

কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসি বলেন, ‘যেখানেই যাই মানুষ একটি কথা বলে। আমারা সরকারের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। ৩২ বছর আমার স্বামী সেনা বাহিনীতে চাকরি করেছে। যখন হিলটেক্সে গেলাম আমাকে সে বলছিল এখানে আমার ঘাম রয়েছে। তার আয়ের প্রত্যেকটি পয়সা সেই পরিশ্রমের।’

ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে তারা ৪০ হাজার করে টাকা দেয়। দুবছর আমার পরিবারের বাজার হয়েছে এই ৪০ হাজার টাকায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করে না কেমন আছো? সন্তানরা কেমন আছে? শহীদ পরিবারের সন্তানদের খবর রাখে না কেউ। এই ঘটনার পর ট্রমা থেকে উঠতে ৩-৪ বছর লেগেছে। সন্তানদের ট্রমা এখনো কাটেনি। নিজেরা নিজেরা কাউন্সেলিং করেছি। কেউ পাশে আসেনি। আমরা কারো সহানভূতি চাই না। দিবসটিকে বিশেষ দিবস ঘোষণা করা হোক। একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হোক।’

মেজর মোহাম্মদ সালেহের স্ত্রী নাসরিন আহমেদ বলেন, ‘বিচার পুরোপুরি জানতে চাই। এতো বড় ঘটনার পেছনে কারা ছিলেন, উদ্দেশ্য কি ছিল জানতে চাই। সন্তানরা জানতে চায়।’

মেজর মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রিটা রহমান বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। যা হলো মেনে নিলাম। কিন্তু জানতে চাই যাদের পোস্টিং এখানে ছিল না তাকে কেন ডেকে আনা হলো। সেটাতো জানতে পারছি না।’

কর্নেল কুদরত এলাহীর ছেলে সাকিব রহমান বলেন, ‘জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি করে পেছনের লোকদের বের করা হোক। তা পাবলিকলি প্রচার করা হোক।’

এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত মেজর হায়দার ও ক্যাপ্টেন আরিফ বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, এটি ‘বিডিআর বিদ্রোহ নয়। হত্যাকাণ্ড।’

আজ সাত বছর :
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই দিনে পিলখানা বিদ্রোহে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। বিজিবি সদর দপ্তর জানায়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে শাহদৎবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের স্মৃতিস্তম্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনবাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বিজিবি মহা-পরিচালক (একত্রে)। ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদ আসর পিলখানার বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র সচিব, বিজিবি মহা-পরিচালক, শহীদদের নিকটাত্মীয়, পিলখানায় কর্মরত সকল অফিসার ও বিজিবি সদস্য এবং বেসামরিক কর্মচারীরা উপস্থিত থাকবেন।

 



মন্তব্য চালু নেই