কেমন করে হিসাব করা হয় ফসিলের বয়স?

কার্বন বিকিরণ করে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। স্থিতিশীল অতেজস্ক্রিয় কার্বণ প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় বা যৌগিক পদার্থের উপাদান হিসাবে পাওয়া যায়। আর তেজস্ক্রিয় কার্বন নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার সাহায্যে সৃষ্টি হয়।

স্থিতিশীল কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন প্রভৃতি গ্যাসসমূহ বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান। মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র, মহাজাগতিক থেকে আসা এক ধরণের তেজস্ক্রিয় রশ্মি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমাদের বায়মণ্ডলে। এইসব রশ্মিকে মহাজাগতিক রশ্মি বলে।

মহাজাগতিক রশ্মিতে যেসব নিউট্রন থাকে সেগুলো বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসগুলোকে আঘাত করে। ফলে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। নাইট্রোজেন নিউক্লিয়াসে ভাঙ্গনের ধরে। ফলে সম্পূর্ণ নতুন ভরসংখ্যার দুটি ভিন্ন পরমাণুর নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়।

নবগঠিত দুটি পরমাণুর একটা হলো হাইড্রোজেন। অন্যটা তেজস্ক্রিয় কার্বন। উৎপন্ন হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তেজস্ক্রিয় কার্বন পরমাণুগুলো বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে তেজস্ক্রিয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গঠন করে। সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির উদ্দেশ্যে বায়ুমণ্ডল হতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (স্থিতিশীল ও তেজস্ক্রিয় উভয় প্রকার) শোষণ করে।

শোষণকরা এসব কার্বন-ডাই-অক্সাইড অণু উদ্ভিদের দেহাভ্যান্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে কাবর্ন (তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয়) ও অক্সিজেন পরমাণুতে বিভক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে অক্সিজেন পরমাণুগুলো উদ্ভিদের দেহ থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয় উভয় প্রকার কার্বন পরমাণু দেহাভ্যান্তরে থেকে যায়।

যেহেতু পশুপাখি ও মানুষ খাদ্য হিসাবে উদ্ভিদ, ফলমূল ও শস্যদানা গ্রহণ করে, ফলে উদ্ভিদের দেহে জমে থাকা কার্বন (তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয়) পশুপাশি ও মানুষের শরীরে চলে যায়। আবার মাংশাসী প্রাণি খাদ্য হিসাবে বিভিন্ন প্রাণিকে ভক্ষণ করে, সুতরাং এসব প্রাণির মাধ্যমে মাংশাসী প্রাণীর শরীরেও কার্বন পৌঁছে যায়। জীবন্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দেহে কার্বনের এই সরবরাহ এমনভাবে ঘটে, মৃত্যুর সময় প্রতিটি জীবদেহে তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয় কার্বনের অনুপাত সর্বদা সমান (১:১) থাকে।

মৃত্যুর সময়ে তেজস্ক্রিয় কার্বনের পরমানুগুলো তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। কিন্তু অতেজস্ক্রিয় কার্বন পরমাণুগুলো নিউক্লিয়াস স্থিতিশীল। তাই মৃতদেহে যুগ যুগ ধরে অতেজস্ক্রিয় কার্বনের প্রতিটি পরমাণু অক্ষুন্ন থাকে।

গবেষণায় প্রমাণিত ও তেজস্ক্রিয় কার্বনের অর্ধায়ু ৫৭৬০ বছর। অর্থাৎ ৫৭৬০ বছর পর কোনো মৃতদেহ মিশে থাকা তেজস্ক্রিয় কার্বন পরমাণুর সংখ্যা কমে অর্ধেক চলে আসে। মানে অর্ধেক অবশিষ্ট থাকে আর কি!

যেহেতু জীবের মৃত্যুর সময় উভয় কার্বনের অনুপাত সমান (১:১) থাকে, সুতরাং অর্ধায়ুকাল পরে মৃতদেহটিতে তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয় কার্বনের অনুপাত হবে ১২ : ১। অনুরূপভাবে মৃতদেহটিতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অর্ধায়ুকাল পরে তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয় কার্বনের অনুপাত হবে ১৪ : ১, ১৮ : ১ ও ১১৬ : ১।

ধরা যাক, একটি ফসিলে ৫০০টি তেজস্ক্রিয় ও ১০০০টি অতেজস্ক্রিয় কার্বন পরমাণু রয়েছে। তাহলে ফসিলটিতে তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয় কার্বনের অনুপাত ১২ : ১। সুতরাং ফসিলটি অর্ধায়ুতে অবস্থান করছে। সুতরাং এর বর্তমান বয়স ৫৭৬০ বছর। ফসিলটিতে যখন তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয় কার্বনের অনুপাত ১৪ : ১, ১৫ : ১, ১৮ : ১, ১১০ : ১ ইত্যাদি হবে তখন ফসিলটির বয়স হবে যথাক্রমে ১১৫২০ বছর, ১৩৩৭৭ বছর, ১৭২৮০ বছর, ১৯১৩৮ বছর ইত্যাদি।

এভাবে তেজস্ক্রিয় ও অতেজস্ক্রিয় কার্বনের অনুপাত নির্ণয় করে কার্বনের অর্ধায়ু দ্বারা একটি গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে যেকোনো পুরোনো বস্তুর বয়স নির্ণয় করা যায়।



মন্তব্য চালু নেই