কে হবেন নতুন রিয়াজ-শাবনূর?

লিমন আহমেদ : বাংলা চলচ্চিত্রে যখন ঝেঁকে বসেছিলো অশ্লীলতা; রুচিশীল দর্শক হল বিমুখ হচ্ছিলেন ঠিক তখন তাদের হলে ফিরিয়ে আনার লড়াইটা করে গেছেন রিয়াজ-শাবনূর জুটি। এই জুটিকে নিয়ে সেসময় অনেক পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান একের পর এক সফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন ভালো গল্প ও নির্মাণ হলে অশ্লীলতা ছাড়াই ছবি ব্যবসাসফল হতে পারে।

সেই তালিকায় চিরদিন থাকবে দেবাশীষ বিশ্বাসের নাম। থাকবে সুপারহিট চলচ্চিত্র ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’র নাম। ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি ভেঙে দিয়েছিলো অনেক ছবির সাফল্যের রেকর্ড। দেশের বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহে টানা এক মাস প্রদর্শিত হওয়ারও সাফল্য আছে ছবিটির। আর এই ছবিতে অভিনয় করে রিয়াজ-শাবনূর তাদের জুটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। আজো এই জুটির ভক্তদের কাছে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবিটি সুখ জাগানিয়া স্মৃতি। এই ছবির সাফল্য দেখে এর্ কপিরাইট নিয়ে কলকাতাতে নির্মিত হয়েছিলো ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’। সেখানেও অভিনয় করেছিলেন সেখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা।

নতুন খবর হলো ছবিটির সিক্যুয়েল তৈরি করতে যাচ্ছেন নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস। এটি নির্মিত হবে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’ নামে। আর এখানে রিয়াজ-শাবনূর জুটির পরিবর্তে কাজ করবেন নতুন কোনো জুটি। এ নিয়ে নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘যখন ছবিটি নির্মাণ করেছিলাম তখন একটা ভালো সময় ছিলো। অনেক সুপারস্টার ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। বিশেষ করে রিয়াজ-শাবনূর জুটির সাফল্য ছিলো রুপকথার মতোই। সেখানে দুর্দান্ত কাজ করেছিলেন এই জুটি। কিন্তু আজ ১৬ বছর পর এসে যখন ছবিটির সিক্যুয়েল করতে যাচ্ছি তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাকে নতুন রিয়াজ-শাবনূর নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কারণ, সেই জুটি আর চলচ্চিত্রে নিয়মিত নন। আর গল্পটিও বাছাই করেছি রিয়াজ-শাবনূরের পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে। তাই নতুন দুটি মুখের সন্ধানে আছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটি পুরনো বিদেশি চলচ্চিত্রের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হবে ছবিটি। আমিই এর চিত্রনাট্য সাজিয়েছি। এখানে দেখা যাবে রিয়াজ-শাবনূরের ছেলে ও তার বউয়ের গল্প। তাই ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কোনো জুটি আমি দেখছি না যারা এই জুটির পরবর্তী জেনারেশন হিসেবে পারফেক্ট। বাপ্পী-মাহি আমার পছন্দ ছিলো। কিন্তু তারাও জুটি হিসেবে এখন আর নিয়মিত নয়। আর শাকিবকে তো রিয়াজের ছেলের চরিত্রে ভাবাই যায় না। তাই সবদিক বিবেচনা করে নতুন দুটি মুখের উপর ভরসা রাখতে চাইছি। হতে পারে টেলিভিশনে কাজ করছে কিন্তু চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়নি। আবার একদম ফ্রেশ দুটি ছেলেমেয়েও হতে পারে। কোনো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা তাদের বাছাই করবো। এ ব্যাপারে শিগগিরই বিস্তারিত জানানো হবে।’

দেবাশীষ তার ছবিটির সিক্যূয়েল নির্মাণ প্রসঙ্গে আরো বললেন, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবিটির জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশ ছোঁয়া। অনেকদিন ধরেই আমাকে অনেকে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবিটির সিক্যুয়েল করার জন্য অনুরোধ করছিলেন। আমিও ভাবছিলাম এমন একটা কিছু করবো। কিন্তু ভালো গল্প নির্বাচন করতে পারছিলাম না। তাই চুপ ছিলাম। অবশেষে একটি গল্প পেয়েছি। এখানে আগের গল্পটির মতো পারিবারিক আবহে প্রেম, কমেডি, সম্পর্কের টানাপোড়েন, যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা ফুটিয়ে তোলা হবে।’

প্রত্যাশার জায়গা থেকে তিনি বলেন, ‘রিয়াজ-শাবনূর জুটিকে নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেছিলাম ২০০০ সালে। ১৬ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে আমার জীবন যাত্রায়। রুচি বদলেছে, ভালো লাগার ধরণ বদলেছে। ভালোবাসার স্টাইল-অনুভূতিতেও অনেক বদলের ছাপ। তাই ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ যেভাবে সাড়া পেয়েছিলো সেটা নাও হতে পারে। আবার বেশিও হয়ে যেতে পারে। আমার ক্যারিয়ারে ‘পথের প্যাঁচালি’, ‘ক্লোজআপ ওয়ান’ এবং ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ এই তিনটি সাফল্যের ট্রেডমার্ক। এ্গুলোর প্রতি আজীবন অন্যরকম ভালোবাসা বোধ করবো আমি। সবাই তো নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করে। তাই আমিও চেষ্টার ত্রুটি রাখবো না ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’ ছবিটিকে প্রথমটির থেকে আরো নান্দনিকভাবে নির্মাণ করতে। বাকীটা দর্শকের বিবেচনার উপর।’

নতুন ছবিতেও রিয়াজ-শাবনূরের উপস্থিতি থাকবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে দেবাশীষ আরো বলেন, ‘রিয়াজ-শাবনূরের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা নিয়েই এর কাজ শুরু করবো। তারা হয়তো অভিনয়ে থাকবেন না, তবে তাদেরকে দিয়েই শুরু হবে আমার ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’র নতুন গল্প। তাদের ছেলের কান্ড-কীর্তি নিয়েই নির্মিত হবে এটি।’

তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় এই নির্মাতা জানালেন, ছবিটি দেশের বড় কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মাণ হবে। চিত্রনাট্য শেষ। চলতি বছরেই শুরু হবে বাকী সব কাজ।



মন্তব্য চালু নেই