কোন সিনেমার কাহিনী নয়, স্বামীকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিলেন স্ত্রী!

২০১৬ আ লাভ স্টোরি।
কোনও সিনেমা নয়। একেবারে বাস্তব। বাদুড়িয়ায় এখন বাপি আর গীতাকে এই নামেই সবাই চেনেন।
কিন্তু কে এই গীতা-বাপি? যাঁদের নাম আজ প্রত্যেক যুগলের মুখে মুখে। অসুস্থ স্বামীকে বাঁচাতে গীতা তাঁর একটি কিডনি দিয়েছেন। গীতার কথায়, ‘‘বাঁচলে দু’জনে একসঙ্গে বাঁচব।’’

গীতা জানান, অকালে স্বামীর মৃত্যু সহ্য করতে পারবেন না দেখে একবার ভেবেছিলেন দু’জনে একসঙ্গে আত্মহত্যা করবেন। তারপর ভয়, চিন্তা আর চোখের জল নিয়েই দিন কাটছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত বদল করলেন তাঁরা। কারণ সেদিন চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল তিন সন্তানের মুখ। আত্মহত্যার পথ থেকে সরে এ বার বেছে নিলেন লড়াইয়ের পথ। ঠিক করলেন নিজের শরীরের একটি কিডনি স্বীমাকে দিয়ে দেবেন। কিন্তু তাতেও খরচা পড়বে আট লক্ষ টাকা। হাতে পুঁজি বলতে গয়না। যা বিক্রি করলে হয়তো হাতে মিলবে হাজার দশেক টাকা।

কথায় আছে মনের জোর থাকলে অসম্ভব নয় কোনও কিছুই। এই লড়াইয়ে অবশ্য বিশ্বাস দম্পতি পাশে পেয়েছেন বাদুড়িয়া পুরসভাকে। চিকিৎসার টাকাটা পুরসভা দিয়েছে।

এই পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাস পাড়ায় ৭ ফুট বাই ৯ ফুটের টালির বাড়ি। একটি মাত্র ঘরে লাবণি, বনানী আর সৌরভকে নিয়ে সংসার বিশ্বাস দম্পতির। অভাব ঢাকা দিতে পারেনি স্বামীর সেলুনের দোকানের সামান্য আয়। তবুও আধ পেটা খেয়ে তিন সন্তানকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করছিলেন তাঁরা। লাবণি প্রথম বর্ষে বিয়ে অনার্স নিয়ে বসিরহাট কলেজে পড়ছেন। বনানী এ বার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। আর সৌরভ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ভাঙা টালির ফাঁকেই সন্তানদের মানুষ হতে দেখে সুখের দিনের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন বিশ্বাস দম্পতি। কিন্তু তিন মাস আগে হঠাৎ কোমরে অসহ্য ব্যাথা হয় বছর পঞ্চাশের বাপিবাবুর।

প্রথম দিকে চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খেতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তা চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। এরপরেই নানারকম পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান বাপিবাবুর দুটি কি়ডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অপারেশন করতে হলে চাই অনেক টাকা। এমন একটা সংবাদে ভেঙে পড়েন গীতা। নুন আনতে পান্তা ফুরনো পরিবারে এত টাকা জোগাড় করা সাধ্যের বাইরে। সব কিছু থমকে যায় বিশ্বাস পরিবারের।

এরপরেই শুরু হয় যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের খবর পেয়ে বাদুড়িয়ার পুরপ্রধান তুষার সিংহ এগিয়ে আসেন। চিকিৎসার জন্য বাপিবাবুকে বেঙ্গালুরুতে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, বাপিবাবুর একটি কিডনির প্রয়োজন।

কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করতে পারলে হয়তো অন্য কোথাও থেকে কিডনির ব্যবস্থা হত। এই টাকা জোগাড় করতেই হিমসিম খেতে হয়েছে গীতাদেবীকে। তাই কোনও দিকে না তাকিয়ে এ বার স্বামীকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা তাঁর। নিজের শরীর থেকে একটি কিডনি দিয়ে দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মাত্র পনেরো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে। তারপর থেকেই স্বামীই আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। কোনওদিন তাঁকে কিছু দিতে পারিনি। এই ছোট্ট উপহার দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’’

তুষারবাবু বলেন, ‘‘আমরা সবাই ঠিক করেছি কিডনি প্রতিস্থাপন খরচ ছাড়াও আগামী এক বছর পরিবারটির সংসার, লেখাপড়া চলানো এবং চিকিৎসা খরচ বাবদ মাসে আট হাজার টাকা দেওয়া হবে।’’
অপারেশনের পর বাপিবাবুর জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থাও করেছে পুরসভা। এ সব দেখে শুনে বাপি বলেন, ‘‘আমি ওকে কিছুই দিতে পারিনি। কিন্তু গীতা আমার জন্য যা কর তা আমি কোনওদিনও ভুলব না। আমি তুষারবাবুর কাছেও কতৃজ্ঞ।’’



মন্তব্য চালু নেই