কোপায় জ্বলে উঠতে পারেননি যে তারকারা

ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর দেখতে দেখতে কেটে গেছে একটি বছর। বিশ্বসেরা তারকাদের মিলনমেলা ভাঙ্গার পর বছর ঘুরে এসে দাঁড়িয়েছিল কোপা আমেরিকা আসর-২০১৫। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের ১২টি দলের মহারণ শুরু হয়েছে ১১ জুন। আর সেটার পর্দা নেমেছে ৯৯ বছর পর চিলির শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে। এই টুনার্মেন্টে দুর্দান্ত ফুটবলীয় ক্যারিশমা ফুটে উঠার কথা যাদের পায়ে তাদের অনেকই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এসব তারকাদের কয়েকজনকে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

নেইমার 
ক্লাবের জার্সিতে প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসালেও দেশের জার্সিতে ঠিক অতোটা খুঁজে পাওয়া যায় না মেসিকে। সময়ের সেরা এই তারাকার ক্ষেত্রে এমন অপবাদ থাকলেও এই দিকটাতেই পার্থক্য রয়েছে নেইমারের। ব্রাজিলের হলুদ জার্সি গায়ে চড়ালেই যেন জ্বলে উঠেন ২৩ বছর বয়সী এই তারকা।

এবারের কোপা আমেরিকা আসরে ব্রাজিলের আশা আকঙ্খঙ্কার প্রতীক ছিলেন নেইমার। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে নেইমারহীন ব্রাজিল সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এরপর তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও লজ্জা শেষ হয়নি দলটির। তবে বিশ্বকাপ শেষে বার্সেলোনা এই তারকার নেতৃত্বে টানা ১১ ম্যাচের জয়ে ছান্দিক ব্রাজিলকে খুঁজে পেয়েছিল সেলেকাও ভক্তরা।

দল ছন্দে থাকায় কোপা শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট তুলে নিয়ে বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের প্রতীক্ষায় ছিল ব্রাজিল। কিন্তু ভাণ্ডারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র নেইমারের অঘটনের মধ্য দিয়েই যেন সব শেষ হয়ে গেছে সেলেকাওদের। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ইনজুরির ফলে আসর শেষ হয়ে গিয়েছিল নেইমারের। কিন্তু এবার কোপাতে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের জন্য লাল কার্ডের খড়গে পড়ে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে তার।

বার্সেলোনার হয়ে মোট মাঠে নেমেছেন ৫০ বার। এর মধ্যে গোল পেয়েছেন ২৬টি। আর জাতীয় দলের হয়ে ৬২ ম্যাচ খেলেই ঝুলিতে ভরেছেন ৪৩ গোল। এই নেইমার অর্জনের দিক থেকে ব্রাজিল কিংবদন্তী পেলেকেও ছাড়িযে যাবেন বলে কয়েকদিন আগে ভবিষ্যত বাণী দিয়েছিলেন পাওলো মালদিনি। কিন্তু মর্যাদার কোপাতে তার মতো একজন খেলোয়াড় অপেশাদার আচরণ অতপর আসর থেকে ছিটকে পরাটা বোধকরি মেনে নিতে পারছেন না ঘোর ব্রাজিল ভক্তরাও।

রাদামেল ফ্যালকাও
কলম্বিয়ার জার্সি গায়ে একসময় বিশ্ব কাঁপিয়েছিলেন রাদামেল ফ্যালকাও। ইনজুরির কারণে ব্রাজিল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে না পারায় তার প্রতি সমবেদনার বান বইয়ে দিয়েছিল কলম্বিয়া সমর্থকরা। কিন্তু ইনজুরি থেকে ফিরে নিজের দুর্দান্ত চেনা ফর্ম হারিয়ে ফেলেন তিনি। মোনাকে থেকে ধারে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিলেও গত মৌসুমটি খাবি খেতে খেতেই কেটেছে তার।

ভুলে যাওয়ার মতো একটি ক্লাব মৌসুম শেষে জাতীয় দলের হয়ে কোপাতে যোগ দেন ফ্যালকাও। ভক্তদের বিশ্বাস ছিল দেশের জার্সিতে ঠিকই চেনা ফ্যালকাওকে খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু কিসের কী? লাতিন শেষ্ঠত্বের আসরেও প্রদীপের নিচের অন্ধকারের মতো ছিলেন তিনি।

এডিনসন কাভানি
ব্রাজিল বিশ্বকাপে কামড় কা-ের শাস্তির কারণে এবারে কোপায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি উরুগুয়ের সবচেয়ে বড় তারকা লুইস সুয়ারেজ। বার্সেলোনা এই তারকার অনপুস্থিতি এডিনসন কাভানিই হয়ে উঠেন দেশটির সবচেয়ে বড় তারকা। চিলিতে অনুষ্ঠিত আসরে গুরুদায়িত্ব পালনের ভূমিকা পরে তার ওপরেই।

ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর হয়ে দারুণ একটি মৌসুম কাটিয়ে কোপায় এসেছিলেন কাভানি। কিন্তু ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দলের সবেচেয়ে বড় তারকা হয়েও কাজের কাজ কিছু করতে পারেননি তিনি। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ম্যাড়ম্যাড়ে পারফরম্যান্স ছিল তার। কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক চিলির বিপক্ষে হারের ম্যাচে লাল কার্ড দেখেন পিএসজি এই তারকা।

লিওনেল মেসি
কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় তারকার নাম লিওনেল মেসি। বার্সেলোনাকে ইতিহাস গড়ে ট্রেবল জিতিয়ে দেশের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে তিনি যে এখন খোলসবন্দি নন সেটার প্রমাণ দিয়েছিলেন গতবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। নিজের সেরাটা দিয়েও ওই আসরের ফাইনালে দলকে নিয়ে গেলেও জার্মানির বিপক্ষে হারের ফলে কিংবদন্তীর কাতারে পৌঁছানো হয়নি চার বারের ব্যালন’ডি অরজয়ী তারকার।

দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপে না পারলেও মর্যাদার কোপা আমেরিকা আসরে এমনই একটি সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। নিজেদের সেরাটার জানান দিয়ে আর্জেন্টাইনরা ফাইনালে পৌঁছলেও ইতিহাস গড়া হয়নি বার্সা সুপারস্টারের নেতৃত্বে¡। উল্টে তাদের হারিয়ে নতুন সূর্যোদ্বয় ঘটিয়েছে চিলি। সমগ্র আসর জুড়ে পেনাল্টি শুটআউট ছাড়া মাত্র একটি গোল পেয়েছেন মেসি। যেখানে বার্সেলোনার জার্সি গায়ে প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসান ছন্দের এই জাদুকর।

তবে নিজে গোল করতে না পারলেও সতীর্থদের দিয়ে ঠিকই করিয়েছেন মেসি। তারপরও ইতিহাস লেখা হয়ে থাকে কেবল সফল ব্যক্তিদের নামেই। আসরের ফাইনালে চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে আরো একটি স্বপ্নের সলিল সমাধি হয়েছে তাদের। সেই সঙ্গে দীর্ঘ ২২ বছরেও মর্যাদার কোপাতে শিরোপার আক্ষেপ ঘোচাতে পারলো না মেসি এন্ড কোং।



মন্তব্য চালু নেই