কোলেস্টেরল কী ও কেন?

কোলেস্টেরল নামক উপাদানটি রক্তের ভেতর প্রবাহিত অবস্থায় থাকে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জমা থাকে চর্বি ও স্নেহজাতীয় পদার্থ হিসেবে। চর্বিজাতীয় পদার্থ আবার শরীরে দুভাবে থাকে- ফ্যাটি এসিড ও কোলেস্টেরল। চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ার পর স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মাঝারি দৈর্ঘ্যের ফ্যাটি এসিড সরাসরি আমাদের রক্তনালির মাধ্যমে শোষিত হয়। আর দীর্ঘ চেইনের ফ্যাটি এসিড কোলেস্টেরল ও লাইপোপ্রোটিন দিয়ে আবৃত হয়ে লসিকাগ্রন্থিতে প্রবেশ করে, পরে রক্তে মেশে। এই লাইপোপ্রোটিনের আকৃতি অনুযায়ী কোলেস্টেরলকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়- এলডিএল বা লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন, ভিএলডিএল, এইচডিএল বা হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন এবং ট্রাইগ্লিসারাইড।

কোলেস্টেরলের কাজ কী?

কোলেস্টেরল মানেই কিন্তু খারাপ কিছু নয়, শরীরে এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। কোষে শক্তি উৎপাদনে, অ্যানজাইমগুলোর কার্যকারিতায়, কোষঝিল্লির গঠনে, হৃদযন্ত্রের বিপাকে এবং রক্তনালির গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরে জমা থাকা অতিরিক্ত চর্বি দীর্ঘ উপবাসের সময় ভেঙে গিয়ে শক্তি উৎপাদন করে জীবন সচল রাখে। চামড়ার নিচে অবস্থিত চর্বি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

কোলেস্টেরলের ক্ষতি

পরিমিত মাত্রায় শরীরে থাকলে কোনো কোলেস্টেরলই ক্ষতিকর নয়। বরং পরিমিত মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকাটাই ভালো। কিন্তু উপকারী কোলেস্টেরল বা হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বাদে অন্যান্য কোলেস্টেরল অতিরিক্ত মাত্রায় থাকলে ক্ষতিকর।

একেকজনের জন্য কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা একেক রকম হতে পারে। কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ ও বয়সভেদেও ভিন্ন হয়। তবে ব্যক্তি বিশেষে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালির দেয়ালে জমা হতে থাকে। রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে অথবা সম্পূর্ণ বন্ধও করে দিতে পারে। এতে স্টেবল অ্যানজাইনা, আনস্টেবল অ্যানজাইনা, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, টিআইএ বা ট্রানসেমিক ইসকেমিক অ্যাটাক, পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ বা পিভিডি, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। সেজন্য আমাদেরকে অবশ্যই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে সেক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে।

কোলেস্টেরণ প্রতিরোধে যেকোনো খাবার খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। শরীরে চর্বি বাড়ার ঝুঁকি কমে যাবে অনেকাংশেই। সবচেয়ে সহজভাবে বলা যায়, যেসব চর্বি সাধারণ তাপমাত্রায় জমে শক্ত হয়ে যায় সেসব চর্বি পরিহার করা উচিৎ। চিংড়ি, কলিজা, মগজ, লাল মাংস, ডিমের কুসুমও খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে।

শরীরে যদি কোলেস্টেরল বেড়েই যায় তবে সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা প্রভৃতি করলে উপকার পাবেন। এতে শরীরের ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইড কমে, উপকারী কোলেস্টেরল বা এইচডিএলের পরিমাণ বাড়ে। তার সঙ্গে ধমনির অভ্যন্তরে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।



মন্তব্য চালু নেই