ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলা দেখার হুকুম কি, ইসলাম যা বলছে?

এ খেলা যিনি দেখবেন, তিনি গুনাহগার হবেন তিন দিক থেকে :

প্রথমত. মূল্যবান সময় নষ্ট করার কারণে, যা একজন মানুষের আওতাধীন সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। আর মানুষ তার জীবনকাল সম্পর্কে সাধারণভাবে এবং যৌবনকাল সম্পর্কে বিশেষভাবে জিজ্ঞাসিত হবে। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিতম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لاَ تَزُولُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ ، عَنْ عُمُرِهِ فِيمَ أَفْنَاهُ ، وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَ أَبْلاَهُ ، وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ ، وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ.
‘কিয়ামতের দিন যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বান্দাকে পাঁচটি প্রশ্ন না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর সামনে থেকে তার দুটি পা এক কদম অগ্রসর হবে না; তাকে তার বয়স সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে; সে কিসে তা ক্ষয় করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে; সে তার যৌবনকালকে কিসের মধ্যে নষ্ট করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে; সে তা কিভাবে উপার্জন করেছে? এবং কোন্ পথে তা ব্যয় করেছে? তার ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে; সে যে ইলম অর্জন করেছিল সে মোতাবেক সে আমল করেছিল কি না? [তিরমিযী : ২৪১৬]

দ্বিতীয়ত. সতর তথা শরীরের আবরণীয় অংশ প্রকাশের

কারণে। আর এটা তো চাক্ষুস সত্য যে ফুটবল খেলায় সতর খোলা থাকে। এদিকে আমরা জানি যে কোনো প্রয়োজন ছাড়া সতর খোলা কিংবা দেখা জায়েয নেই।

তৃতীয়ত. এতে করে সালাতে বিলম্ব কিংবা সালাত সম্পূর্ণ তরকই হয়ে যায়। এটাও চাক্ষুস ব্যাপার যা অস্বীকারের উপায় নেই। বরং বড় বড় টুর্নামেন্টগুলোয় সবাই জোহরের পর স্টেডিয়ামে আসতে শুরু করে আর মাগরিব পর্যন্ত খেলা দেখে। ফলে আছর নামাজটি অবলীলায় ছুটে যায়। অথচ আছরই সেই সালাত আল্লাহ তা‘আলা যার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে আদেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘লা ইরশাদ করেছেন,
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وٱلصَّلَوٰةِٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْلِلَّهِ قَٰنِتِينَ٢٣٨﴾ [البقرة: ٢٣٨]
‘তোমরা সালাতসমূহ ও মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযত কর এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৩৮}

তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতেও নানাভাবে এ সালাত বিনষ্ট করার ব্যাপারে কঠোরহুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। যেমন : ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« الَّذِى تَفُوتُهُ صَلاَةُ الْعَصْرِ كَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ وَمَالَهُ » .
‘যার আসর সালাত ছুটে যায়, সে এমন যেন তার (তাবৎ) পরিবার ও সম্পদ হারিয়ে ফেলেছে।’ [বুখারী : ৫৫২; মুসলিম : ৯৯১]

আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ تَرَكَ صَلاَةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ » .
‘যে ব্যক্তি আসরের সালাত তরক করলো সে তার (সব) আমলই হারিয়ে ফেলল।’ [বুখারী : ৫৫৩]

ফুটবল খেলার জন্য সালাত বিলম্ব করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শায়খ উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘‌টুর্নামেন্ট দেখার জন্য আপনাদের সালাতে দেরি প্রসঙ্গে বলব, দেখুন আমি আপনাদের পরমপ্রিয় ভাই হিসেবে উপদেশ দিচ্ছি, আপনারা টুর্নামেন্ট দেখে নিজেদের মহামূল্য সময় নষ্ট করবেন না। কারণ, এতে আমি আপনাদের দুনিয়া বা আখিরাতের কোনো কল্যাণের দিক দেখি না। সন্দেহ নেই এ কেবল সময়ের অপচয়। তাছাড়া আমার জানা মতে অনেক খেলায়ই সতর খোলা থাকে। ট্রাইজারগুলো থাকে উরুর অর্ধেক পর্যন্ত বা এর কাছাকাছি। খেলোয়াড়রা সবাই থাকে তরুণ-যুবা। আর সন্দেহ নেই যুবকদের উরু উন্মুক্ত থাকলে তা ফিতনার কারণ হতে পারে। তেমনি এসব খেলোয়াড়কে দর্শকরা এমন ভক্তি-সম্মান করেন, খেলার বাইরের দিকগুলো বিবেচনা করলে তারা এর উপযুক্ত হতে পারেন না।

– শাইখ আবদুর রহমান ইবন আবদুল্লাহ আল-সুহাইম
– অনুবাদ : আলী হাসান তৈয়ব



মন্তব্য চালু নেই