ক্ষত ভালো করার প্রাকৃতিক উপায়

আঘাতের ফলে দেহে ক্ষত হওয়ার অভিজ্ঞতা প্রায় প্রতিটি মানুষেরই থাকে। ছোট খাট ক্ষতের ফলে ত্বকের উপরিভাগে কেটে যায় বা ছিলে যায় বা ছিদ্র হয়। ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার সাধারণ কারণ হচ্ছে দুর্ঘটনা বা আঘাত পাওয়া। এছাড়াও বয়স, অসুস্থতা, স্টেরয়েড ব্যবহার, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি, ডায়াবেটিস ও অত্যধিক ধূমপান আঘাত প্রবণ হওয়ার কারণ। ক্ষত হওয়ার সাথে সাথে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় তা হল- লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া করা, রক্ত পড়া, পুঁজ বের হওয়া এবং ব্যথা করা।
ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য সকল ধরণের ক্ষতের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। ছোটখাট ক্ষত কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের দ্বারা ঘরেই নিরাময় করা যায়। সাধারণ আঘাতের ঘরোয়া প্রতিকারগুলো সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

১। ক্ষত পরিষ্কার করুন
ক্ষতর স্থানটি সঠিক ভাবে পরিষ্কার করা নিরাময়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষত পরিষ্কার করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে প্রবাহমান পানিতে ধুয়ে নেয়া। আঘাতের স্থানটি সাবান দিয়ে ও কলের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন প্রায় ১০-১৫ মিনিট যাবত। এর ফলে ময়লা, ধুলাবালি ও ব্যাকটেরিয়া যতটা সম্ভব দূর হবে। ঠাণ্ডা পানি ব্যথা কমতেও সাহায্য করে। তারপর একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ক্ষতর স্থানটি মুছে নিন। তারপর স্টেরাইল ড্রেসিং বা ব্যান্ডেজ বেঁধে দিন।

২। নারিকেল তেল
খুবই কার্যকরীভাবে ক্ষত নিরাময় করতে পারে নারিকেল তেল। কারণ নারিকেল তেলে ব্যাকটেরিয়ানাশক, প্রদাহনাশক, ময়েশ্চারাইজিং ও হিলিং উপাদান সমৃদ্ধ। এটা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও নারিকেল তেল সংক্রমণ ও দাগ প্রতিরোধ করে। আঘাতের স্থানটিতে এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল লাগান। এর উপর ব্যান্ডেজ লাগান। দিনে ২-৩ বার ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করে নারিকেল তেল লাগান।

৩। নিম
নিমে উচ্চমাত্রার এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড থাকে যা কোলাজেন তৈরি করে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান আছে। ১ টেবিলচামচ নিম পাতার রসের সাথে ১ চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ক্ষতের মধ্যে এই পেস্ট লাগান। কয়েকঘন্টা পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন।

৪। হলুদ
হলুদ প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টিবায়োটিক এজেন্ট যা ছোটখাট ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। মলেকিউলার ও সেলুলার বায়োক্যামিস্ট্রি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, হলুদের কারকিউমিন ক্ষত নিরাময়ে উন্নতি ঘটায় কোলাজেন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এবং প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন কমায়। যদি ক্ষত থেকে রক্ত পরে তাহলে ক্ষততে সরাসরি হলুদ গুঁড়া দিলে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হবে।

৫। মধু
ক্ষত নিরাময়ে মধু চমৎকার ভাবে কাজ করে। এন্টিবায়োটিকের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী মধু। ল্যাব টেস্টে দেখা গেছে যে, অনেক বেশি ব্যাকটেরিয়া কোষ ধ্বংস করতে পারে মধু এবং প্রাথমিক পর্যায়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কাঁচা মধু ব্যবহার করতে হবে। মধু যখন ক্ষতের রক্ত ও টিস্যুর সাথে মিশে তখন গ্লুকোজ ও অক্সিডেজ এনজাইমের প্রতিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন পারক্সাইড উৎপন্ন হয়। এটি আস্তে আস্তে মুক্ত হয় এবং ব্যাকটেরিয়া নাশক কাজ শুরু করে এবং টিস্যুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। তাই আঘাতের স্থানে মধু লাগিয়ে ড্রেসিং প্যাড দিয়ে বেঁধে দিন।

রসুন, অ্যালোভেরা, আলু, টি ট্রি ওয়েল ব্যবহার করেও ক্ষত নিরাময় করা যায়। কিন্তু মারাত্মক ধরণের ক্ষত, গভীর বা সংক্রমিত ক্ষতের চিকিৎসা জন্য অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই