ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে চায় সরকার!

ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবণতা দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট বিকেন্দ্রীকরণ নীতি না থাকলে সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। তাই স্বায়ত্তশাসিত স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতি প্রণয়নের দাবি উঠছে অনেক আগে থেকেই। তাছাড়া বিগত নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নিজেদের ক্ষমতা কমে যাওয়ার ভয়ে এর নীতি প্রণয়ন কিংবা বাস্তবায়নও করেনি।

কিন্তু এবার ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

যদিও মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট গণভবনে জেলা পরিষদের প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবারো নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। বাড়ানো হবে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা। একইসঙ্গে জেলাভিত্তিক উন্নয়ন করা হবে। কেন্দ্রের কাছে শুধু বাজেট, পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে।’

সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হয়তো বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশনে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রস্তুতি নিতে বলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্যই জানা গেছে। যদিও সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি জনপ্রশাসনমন্ত্রী।

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘দেশের সব জায়গায় প্রশাসনিক সেবা পৌঁছে দিতে হবে। আর প্রশাসনের সবকিছু যেন ঢাকা কেন্দ্রিক না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। জনপ্রশাসনকে হতে হবে আরো সৃষ্টিশীল।’

মন্ত্রী ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রী কিংবা শাসক হিসেবে আসিনি, আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে এসেছি। আপনাদের মেধা, দক্ষতা ও উদ্যোগ- এগুলোই আমাদের সম্বল। এর মাধ্যমে আমরা দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে চাই।’ সেই সঙ্গে মন্ত্রী জানান, প্রশাসনে যারা অধিক দক্ষ তারাই এক সময় সচিব হবেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জনপ্রশাসনমন্ত্রী কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ সম্পর্কেও সম্মেলনে বলেছেন তিনি। তবে অস্ত্র চালানো না জানলে যেমন কারো হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া যায় না, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই। তাছাড়া বিকেন্দ্রীকরণ কার্যক্রম সময়সাপেক্ষ।’

তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। এ ক্ষেত্রে আমরা মন্ত্রীর কাছ থেকে ভালো দিকনির্দেশনা পেয়েছি। একটি হলো- রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। আর স্থানীয় কার্যালয়গুলো থেকে হবে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ। এজন্য প্রস্তুতিও নিতে হবে।’

অধিবেশনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, ‘চাহিদাভিত্তিক আমলাতন্ত্র দরকার। আর সেভাবেই আপনাদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।’

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধিবেশনে গাজীপুর জেলার জেলা প্রশাসক নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি দেয়ার কথা বলেন। একই সঙ্গে যারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আছে তাদেরকেও পদোন্নতি দেয়ার পক্ষে কথা বলেন তিনি।

তৃতীয় শ্রেণীর চাকরিজীবীদের সেবার মনোভাব বাড়ানোর উপরও গুরুত্বারোপ করেন একজন জেলা প্রশাসক। জেলা শহরগুলোর পুরাতন সার্কিট হাউসগুলো সংস্কার ও নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণের দাবিও করেছেন তারা। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে অবস্থিত উপ-পরিচালকের (স্থানীয় সরকার) কার্যালয়ে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টিরও দাবি জানানো হয়েছে।

এছাড়া যেসব জেলার আয়তন বড় সেসব জেলা প্রশাসকদের গাড়ির জন্য তেল কেনা বাবদ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে ডিসিদের পক্ষ থেকে। আর এসব দাবির বিষয়ে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই