ক্ষেতেই বিলীন হচ্ছে চাষির স্বপ্ন

সরকার দুলাল মাহবুব, রাজশাহী থেকে : এক কেজি ইলিশের দামে পাওয়া যাচ্ছে ২০ মণ চিচিংগা ১২ মণ পটল। পাইকারি বাজারে এক কেজি করলা পাঁচ টাকা। এক কেজি কাঁচা মরিচ ১০ টাকা। এটি রাজশাহীর সবজির পাইকারি বাজারের চিত্র।

এবারে জেলায় সবজিতে রোগ বালাই না থাকা এবং ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে সবজির আবাদ ভাল হয়েছে। উৎপাদনের চেয়ে ক্রেতা কম থাকায় দাম কমেছে বলে জানান কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা। ক্ষেতেই বিলীন হচ্ছে চাষির স্বপ্ন। তবে যারা আগাম ফসল তুলেছেন তারা কিছুটা দাম পেয়েছেন।

রাজশাহীর অন্যতম পাইকারি মোকাম নওহাটা বাজার। এই বাজার থেকে শহরের সাহেব বাজারের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। অথচ মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরত্বের ব্যবধানে এই খুচরা বাজারে সবজির দামে তফাৎ অনেক। অন্তত: দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি।

কৃষক আক্কাস আলী বিশ্বাস দুই মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে এনেছেন পারলা পাইকারি বাজারে। দু-তিনজন ক্রেতা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৮ থেকে ১০ টাকা বলছেন। জেলার পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক আকবর আলী এই বাজারে নিয়ে এসেছেন লাউ। প্রতিটি লাউ মাত্র তিন থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোহনপুরের বেড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক ইয়াদ আলী নিয়ে এসেছেন করলা।

পাইকারি বাজারে ক্রেতারা প্রতি কেজি দাম বলছেন মাত্র ৫-৬ টাকা। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ওই দামেই সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন ইয়াদ আলী। রোববার বিদিরপুর বাজারে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

কৃষকরা জানান, এবছর প্রথম থেকেই মরিচসহ সবজির দাম কম। গতবছর নি¤েœ ৫০ থেকে উর্ধ্বে ১৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ, ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বেগুন, প্রতি কেজি পটল ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে।

সবজির ভাল ফলন হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা কম। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। দাম কম হওয়ায় অনেকে ক্ষেত থেকে সবজি তুলছেন না। আবার অনেকে পটল, তরই, লাউ গরুকে খাওয়াচ্ছেন। মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের চাষি ইউসুফ আলী জানান, জমি থেকে সবজি তুলতে একজন শ্রমিককে ২শ’ টাকা থেকে ৩শ’ দিতে হয়। এরপরও আছে পরিবহণ খরচ।

এক মণ পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৪০ টাকায়। যা তিন মণ পটলের বিক্রিতে একজন শ্রমিকের দামের সমান। অনেকেই পটল না তুলে ক্ষেতেই নষ্ট করছে। আবার যাদের গরু ছাগল আছে তারা ছাগল-গরুকে খাওয়াচ্ছে।

দুর্গাপুর উপজেলার কিসমতগণকৈড় গ্রামের রহিদুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, তাইজেল আলী বলেন, প্রতিমণ করলা ৫শ’ টাকার নীচে হলে কৃষকের লোকসান গুণতে হবে। কারণ এবারে শ্রমিক খরচ, চাষের মাচার উপকরণসহ রোগ বালাই দিয়ে কমপক্ষে প্রতিবিঘা জমিতে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ এবারে ১৬০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে প্রতিমণ করলা বিক্রি করতে হচ্ছে।

অনেক চাষি বলেন, লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই চলছে সবজি চাষিদের পথচলছি। সামনে দাম না বাড়লে পাওনা দারের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াতে হবে।

কৃষক ও সবজি ব্যবসায়ী পবার বরইকুড়ি গ্রামের মোমিন হোসেন বলেন, আজকের বাজারে (রোববার) বিদিরপুর পাইকারি বাজারে প্রতিমণ ৮০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, করলা ১৬০ টাকা থেকে ২শ’ টাকা, চিচিংগা ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। মরিচের দাম গত সপ্তাহে একটু বেশী থাকলেও এখন আবারো ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সবজির বড় বাজার তাহেরপুর, ভবানীগঞ্জ, বাঘা বাজার, কানপাড়া, বানেশ্বর, দুর্গাপুর, কেশরহাট পাইকারি বাজারে সবজির দাম একই রকম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, সবজির দাম কমে যাওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে সবজি চাষিরা কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। না উঠানোর জন্য অনেক সবজিও ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই