কড়া শাসন ও নির্যাতনে মাদ্রাসা থেকে পালায় ৪ শিশু

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে নিখোঁজের পর উদ্ধার হওয়া চার শিশু অতিরিক্ত পড়ার চাপ, কড়া শাসন ও নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়েছিল।

রোববার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

তবে কড়া শাসন বা বেত্রাঘাতের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে চান না বলে জানিয়েছেন শিশুদের অভিভাবকরা। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তারা নিশ্চিত হন যে, ওই চার শিশু সিলেটগামী পাহাড়িকা ট্রেনে উঠেছে। এরপর শনিবার তারা সিলেট মাজারসহ বিভিন্ন স্থানে তল্ল¬াশি শুরু করেন। এদের মধ্যে তিন শিশু আবার ঢাকাগামী পারাবত ট্রেনে করে শায়েস্তাগঞ্জে এসে নামে। পরে তারা বানিয়াচং উপজেলার বালিখাল গ্রামে নয়নের ফুপুর বাড়ি যায়। সেখান থেকে পুলিশ রাত ৯টার দিকে তাদের উদ্ধার করে। অপর এক শিশুকে রাত ৩টার দিকে সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার থেকে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘মাদ্রাসায় শিশুদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। কড়া শাসন থেকে বাঁচতে তারা মাজারে গিয়েছিল। শিশুদের উদ্ধারের পর থেকে তাদের অভিভাবক, মাদ্রাসার শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।’

যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের নির্যাতন দ-নীয় অপরাধ। এ বিষয়ে অভিভাবকরা কোনো ব্যবস্থা নিতে চান কি না, এ প্রশ্ন করা হলে অভিভাবকরা জানান, তারা ওই শিক্ষককে একবার সুযোগ দিতে চান। শিক্ষককে কারাগারে পাঠাতে তারা রাজি নন। অন্যদিকে শিক্ষক নিজেও নির্যাতন চালানোর জন্য অনুতপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে শিশুরা জানায়, হুজুর তাদের শাসন করেছিলেন। এজন্য তারা মাজারে গিয়েছিল দোয়া করতে, যেন তারা শাসন ও নির্যাতন থেকে মুক্তি পায়।

শিশুদের অভিভাবকরা জানান, শাসন না হলে মাদ্রাসায় শিশুরা পড়তে চায় না। তারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে চান না।

পুলিশ ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার সুতাং পূর্ব নোয়াগাঁও হাজী সুরুজ আলী সুন্নিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র বাহুবল উপজেলার পশ্চিম শাহাপুরের চারগাঁও গ্রামের আহমদ রশিদ মনুর ছেলে তানভীর রশিদ রাফি (১৩), তার ভাগ্নে একই উপজেলার আব্দানারায়ণ গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ (১২), নবীগঞ্জ উপজেলার সুজাপুর গ্রামের আব্দুল্ল¬াহর ছেলে আজহারুল ইসলাম নয়ন (১২) ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দরিয়াপুর গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে সোহানুর রহমান (১১) শুক্রবার মাদ্রাসা থেকে বের হয়। শায়েস্তাগঞ্জে পাঞ্জাবি বানানোর কথা বলে যায় তারা। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত তারা ফিরে না আসায় ওই এলাকায় হুলুস্থুল পড়ে যায়। গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করে।

এ খবর পেয়ে পুলিশ শিশুদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় রাফি, ইমতিয়াজ ও নয়নকে তার ফুপুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

অপর শিশু সোহানুর হজরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করতে যায়। সেখান থেকে রাতযাপনের জন্য সে হজরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজারে আসে। রাত ৩টার দিকে তাকে সেখান উদ্ধার করে পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই