খরচ কম লাভ বেশি ॥ পাতি চাষে ঝুকছে চাষি

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা: নওগাঁর রাণীনগরে চলতি রবিশস্য মৌসুমে ধান, গমের পাশাপাশি পাতি চাষে ঝুকছে চাষি। খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় ইরি-বোরো ধান চাষের আগ্রহ কিছুটা কমিয়ে বনপাতি ও জলপাতি চাষে দিকে কৃষকদের মনোযোগ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সময় এই জনপদে এই ফসল তেমন না হলেও মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে কদর বেশি থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য ফসলের সাথে রেকর্ড পরিমাণ পাতি চাষ করেছে এই উপজেলার কৃষকরা। ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে পাতি ভাল হওয়ায় কৃষকরা কাটা শুকানো শুরু করাই বাজারে পুরোদমে ভাল দামে বিক্রয় হচ্ছে। গত বন্যায় রোপা-আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় আগাম গম চাষের সাথে পাতি চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠে চাষীরা।

সরকার পর্যায় থেকে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য কৃষি উপকরণ, বীজ, রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হলেও পাতি চাষের জন্য প্রান্তিক কৃষকদের কোন প্রকার সহযোগীতা করা হয় না। চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় পাতি চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় পাতির পাশাপাশি গম, ভোট্টারও ভাল ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই পাতি ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে অল্প পরিসরে ঘরে তুলে ভাল বিক্রয় মূল্য পাওয়ায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে তারা লাভবান হবে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করেন।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ১শ’ হেক্টর জমিতে বনপাতি ও জলপাতি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চলতি বছরে উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাতির আবাদ হয়েছে। শুরুতেই ভাল আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং পাতির ক্ষেতে রোগ-বালাই না থাকায় ও মাঠ পর্যায়ে পাতি চাষিদের উপ-সহকারি কৃষি অফিসাররা যথা সময়ে উপযুক্ত পরামর্শ নজরদারি ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে পাতি ক্ষেত অনেকটা ভাল হয়েছে। তবে মিরাট, গোনা, কাশিমপুর, রাণীনগর সদর, কালীগ্রাম ও পারইল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পাতি চাষ হয়েছে। পাতি কাটার মৌসুমে রোদ ভাল থাকলে মানসম্পূর্ণ ভাবে শুকাতে পারলে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫০হাজার টাকার বিক্রয় হবে। এতে পাতি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।

উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের পাতি চাষি মোঃ ছানা ইসলাম, মোঃ মনছের আলী (চুন্ডি) জানান, আমরা এবছর ইরি-বোরা ধান চাষের পাশাপাশি কিছু জমিতে পাতি চাষ করেছি। মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ পাতি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় আমরা পাতি চাষ করছি। এবছর কাটা এবং শুকানোর পর চরা দামে বিক্রয় করতে পারলে আগামী বছরে পাতি চাষের পরিধি বৃদ্ধি করবো।

উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪/৫ টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমান পাতি চাষ হয়েছে। কুটির শিল্পের মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ পাতি। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভ বেশি হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি জলপাতি চাষে ঝুকছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্চার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে রাণীনগর উপজেলায় জল পাতি আবাদ ভাল হবে বলে আশা করছি।#



মন্তব্য চালু নেই