খাদ্যে বিষ: বিক্রেতা বলে আছে, ডিসিসির যন্ত্র বলে নেই

রাজধানী প্রায় প্রতিটি কাঁচাবাজারের মাছ, শাক-সবজি ও ফলে ফরমালিক পরীক্ষা করে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ)। গত এক বছর ধরেই এ অভিযান চলছে। কিন্তু সম্প্রতি এ যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি বিক্রেতা তার পণ্যে ফরমালিন থাকার কথা স্বীকার করলেও যন্ত্রে ধরা না পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এখন যন্ত্রগুলো নিয়েই বেকায়দায় পড়েছে দুই সিটি করপোরেশন।

করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রেতাদের পাশপাশি বিক্রেতারাও নিশ্চিত করে যে মাছটিতে ফরমালিন রয়েছে বলে জানাচ্ছেন সেই মাছটি পরীক্ষা করলে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও ক্ষুব্ধ।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) উদ্ভাবিত ফরমালিন পরীক্ষার এই যন্ত্রগুলোতে গত এক বছর ধরেই কোনো বাজারে মাছ বা শাকসবজিতে ফরমালিন খুঁজে পাচ্ছে না। এ অবস্থায় সংস্থাটিকে একটি চিঠি দিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করার কোনো যন্ত্র না থাকায় এ বিষয়ে করণীয় জানতে চেয়েছে।

অবশ্য সিটি করপোরেশন মাছে ফরমালিন পরীক্ষার যে যন্ত্র ব্যবহার করছে তা নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে। এই যন্ত্র দিয়ে ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করতে গিয়ে ভুল রিডিংয়ের কারণে শত শত টন ফল ধ্বংসও করা হয়েছে।

এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যন্ত্রের কার্যকারিতা চ্যালেঞ্জ করে জনৈক আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করলে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর আদালত খাদ্য ও ফলমূল পরীক্ষার জন্য সঠিক ফরমালিন যন্ত্র নির্বাচন এবং সংগ্রহ করার নির্দেশ দেন। খাদ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের ৩০ দিনের মধ্যে ওই যন্ত্র সংগ্রহে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

এরপর থেকে মাছে ফরমালিন শনাক্তের জন্য সিটি করপোরেশনের বর্তমান যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হলেও ফলে ফরমালিন শনাক্তের কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি। কী উপায়ে ফলে ফরমালিন শনাক্ত করা হবে সে বিষয়ে জানাতে বিসিএসআইআরকে চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন।

সূত্র জানায়, রাজধানীর মাছ ও ফলের বাজারগুলোতে নিয়মিত ফরমালিন পরীক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রাধীন বাজারগুলোর মাছ ও ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করে ওই বাজারকে ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে প্রতিমাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদনও পাঠাতে হয়। কিন্তু গত এক বছরে সিটি করপোরেশনের পরীক্ষায় কোনো বাজারে ফরমালিন না পাওয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিটি করপোরেশকে এ বিষয়ে আরো দায়িত্বশীল হতে নির্দেশ দেয়া হয়।

এ অবস্থায় দক্ষিণ করপোরেশন করণীয় নির্ধারণে গত ১৯ এপ্রিল জরুরি সভা ডাকে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশে খাদ্য উৎপাদনকারী অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যসহ নামের তালিকা দিতে বিএসটিআইকে চিঠি দেয়। একই সঙ্গে ফরমালিন শনাক্তকরণ যন্ত্র উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান সিএসআইআর-কেও চিঠি দেয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বিসিএসআইআর উদ্ভাবিত ফরমালিন টেস্ট কিট দিয়ে করপোরেশনের আওতাধীন সব কিচেন মার্কেটে সরবরাহকৃত মাছ পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু অনেক দূরবর্তী স্থান হতে সরবরাহ করা হলেও গত এক বছরে মাছে কোনো ফরমালিনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

চিঠিতে আরো বলা হয়, মাছের মতো ফলের ফরমালিন/কার্বাইডের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য বাজারে কোনো কিট না থাকায় জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ফলে ভেজাল শনাক্তকরণ কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় কী উপায়ে ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হবে সে বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাতে অনুরোধ করা হলো।

জানা গেছে, বাজারে আসা ফলে দুই ধরনের রাসায়নিক মেশানো হয়, এগুলো হলো: কার্বাইড ও ফরমালিন। কার্বাইড দিয়ে দ্রুত ফল পাকানো হয়। আর ফরমালিন দিয়ে দীর্ঘদিন তাজা রাখা হয়। এসব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

যন্ত্রের এই দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘গত এক বছর ধরে সিএসআইআর এর উদ্ভাবিত ফরমালিন শনাক্তের যন্ত্রগুলো কোনো কাজে আসছে না। যন্ত্রগুলো দিয়ে বাজারের ফলমূল ও মাছ পরীক্ষা করলে দেখা যাচ্ছে কোনো ফরমালিন নেই। অথচ যারা বিক্রেতা তারা আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, তাদের মাছে ফরমালিন আছে।’

তিনি বলেন, ‘ফরমালিনযুক্ত মাছ পরীক্ষা করেও যখন ফরমালিন পাওয়া যাচ্ছে না তখন আমাদের সন্দেহ হয়। এ বিষয়ে কী করণীয় সে বিষয়ে জানাতে উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি। তারা সিদ্ধান্ত জানালে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবো।’

ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রের কারণে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এতে করে জনগণের স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিক বৈঠক করেছি। যোগ করেন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।



মন্তব্য চালু নেই