খালেদার দেশে ফেরার পর পাল্টে যাবে বিএনপি!

৫ জানুয়ারির ধাক্কা সামলে ওঠার জন্য নিরলস চেষ্টা করছে বিএনপি। আন্দোলনে জ্বালাও-পোড়াওয়ের জেরে হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে বন্দী রয়েছেন এবং বিদ্যমান কঠিন বাস্তবতায় কীভাবে দলকে আবার সক্রিয় করা যায় সে লক্ষে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সৌদি আরব গিয়ে মা-ছেলের সাক্ষাতের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার পর লন্ডন সফরে তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা রয়েছে।

চিকিৎসার পাশাপাশি দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করার একটা ব্যবস্থা করেই চেয়ারপারসন এই সফরে বের হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে-বিএনপিকে সক্রিয় করা। আর এজন্য দলকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করা।

দলের মধ্যে বলাবলি হচ্ছে-দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর পাল্টে যাবে বিএনপির রাজনীতির গতি-প্রকৃতি।

দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একটি ধারণা কাজ করছে যে, দলের বর্তমান ও ভবিষ্যত দুই কাণ্ডারির মধ্যে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামীতে দল পরিচালনার কর্মকৌশল নিয়ে বিশদ আলোচনার পর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নই দলকে চাঙ্গা করে তুলবে।

দলের আস্থাভাজন বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার পরামর্শও এ ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে বলে জল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই লন্ডন পৌঁছেছেন কেউ কেউ।

শীর্ষ নেতাদের আরও কয়েকজন শিগগিরই লন্ডন আলোচনায় যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন সূত্রে নানা খবর ভেসে বেড়ালেও চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহর বক্তব্য হচ্ছে- “শুধু চিকিৎসার জন্যই তিনি (খালেদা জিয়া) লন্ডন গেছেন বা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গেছেন বিষয়টা এমন নয়। সেখানে দেশের স্বার্থে এবং দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কার নিয়ে আলোচনা হবে।”

মঙ্গলবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। একই বিমানে লন্ডন গেছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল।

দলের বিভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ লন্ডন থাকবেন খালেদা জিয়া। এসময়ের মধ্যে চোখ এবং পায়ের চিকিৎসা করাবেন।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টিকে আগে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারপারসনের জন্য পশ্চিম লন্ডনের একটি হোটেলে বুকিং রয়েছে। তবে তিনি তারেক রহমানের বাসা এবং হোটেলে মিলিয়ে অবস্থান করবেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। বিশেষ করে, দুর্নীতি ও নাশকতার মামলায় তাদের সাজা হলে আগামী দিনে দল কিভাবে পরিচালিত হবে সেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর থেকে লন্ডনে এসে যুক্ত হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. ওসমান ফারুক, বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন।

এছাড়া তাবিথের বাবা চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুও ইতিমধ্যে থেকে লন্ডনে পৌঁছেছেন বলে একটি সূত্রে জানা যায়।

অন্যদিকে ঢাকা থেকে গত মঙ্গলবার অর্থনীতি বিষয়ক একটি সেমিনারে যোগ দিতে দিল্লি গেছেন চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। ওই সেমিনার শেষে তারও লন্ডন যাওয়ার কথা আছে।

এদিকে সফর থেকে দেশে ফেরার পর বিএনপি প্রধান কী করবেন সেটা নিয়ে আগ্রহের পাশাপাশি দলের নেতাদের অনেকের মধ্যে আতঙ্কও দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে বিগত আন্দোলনে যেসব নেতা মাঠে ছিলেন না। পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ আছে সেসব নেতার ভয়টা বেশি।

তবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এবারের সফরে আশার আলো দেখছেন। তাদের ধারণা সফরের মাধ্যমে আগামী দিনে দলের জন্য ভালো কিছু সিদ্ধান্ত আসবে।

লন্ডন সফর নিয়ে আ স ম হান্নান শাহ বলেন, “এটা শুধু মা-ছেলের সাক্ষাৎ নয়, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে চেয়ারপারসনের সাক্ষাৎ। তারা দলের বর্তমান দুরাবস্থা, সাংগঠনিক দুর্বলতা, মামলা মোকাবেলায় আগামী দিনে দলের কর্মকৌশল ঠিক করবেন। এর ফলে আগামীতে দল আরও বেগবান হবে, লাভবান হবে।”

আর বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর নতুন উদ্যামে কাজ শুরু হবে। আর এতে গণতন্ত্র রক্ষা এবং সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে বলে মনে হয়।”

দল পুনর্গঠনে এই সফর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পুনর্গঠন এটা রুটিন কাজ। তবে যারা দলের জন্য নিবেদিত তারা অবশ্যই এগিয়ে থাকবে। তাই বলে অন্যরা বাদ না গেলেও হয়তো পেছনের দিকে থাকবেন।” ঢাকাটাইমস।



মন্তব্য চালু নেই