খালেদার সেই ‘একমাস’ আসেনি ২৮ মাসেও

আহ্বায়ক কমিটিকে ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে একমাসের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেটাও ২৮ মাস আগে। কিন্তু নানা অজুহাতে কমিটির মেয়াদ বাড়লেও চেয়ারপারসনের সেই নির্দেশ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে ঢাকায় আন্দোলন গড়ে না তুলতে না পারাকে চিহ্নিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ জন্য ওই নির্বাচনের ছয় মাসের মধ্যে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন খালেদা জিয়া।খবর ঢাকাটাইমসের।

বিএনপি চেয়ারপারসন এই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ঢাকা মহানগরে সম্মেলন করতে। ঢাকা মহানগরে সংগঠনকে শক্তিশালী করে জোড়ালো আন্দোলনে নামবেন-এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা।

আহ্বায়ক কমিটির নেতারা দায়িত্ব পেয়েই মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে কথা বলেছেন, গণমাধ্যমে প্রায়ই ‘জেহাদি’ বক্তব্য দিয়েছেন। সংগঠনকে গুছিয়ে এনে সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলন গড়ার কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ফেলে দিয়ে ‘জনগণের সরকার’ গঠনের অঙ্গীকার করেছেন।

কিন্তু ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন বিএনপি নেত্রীর ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচিতে এই আহ্বায়ক কমিটিও বিএনপির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তারাও ঢাকা মহানগরে বলার মত সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি।

বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান খোকন বলেন, ‘সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে কথা না বলে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।যে অবস্থায় কমিটি দেয়া হয়েছিল তখন দেশের অবস্থা কেমন ছিল তা সবাই জানে।ওই অবস্থায় আন্দোলন সংগ্রাম করে সফল হওয়া সম্ভব না।’

শুধু তাই নয়,কর্মসূচিতে তো ছিলেনই না, আন্দোলন বন্ধ হওয়ার পরও দীর্ঘদিন গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে ছিলেন সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আত্মগোপনে ছিলেন মির্জা আব্বাস।

এই যখন অবস্থা তখন অনেকদিন ধরে গুঞ্জন চলছে, আওয়ামী লীগের আদলে দুইভাগ করা হবে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি। চারভাগ হতে পারে এমন খবরও শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। কবে হবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। এ নিয়ে পদ প্রত্যাশী, নেতাকর্মী সবাই অন্ধকারে।

দুইভাগ হলে দক্ষিণের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘নানা কথা শুনতেছি।কেউ বলে দুইভাগ হবে,আবার কেউ বলে ভাগ হবে না। আবার চারভাগের কথাও শুনছি। কিন্তু সঠিক কোনো খবর কেউ পাচ্ছে না।আমরা চাই দ্রুত সময়ে কমিটি দেয়া হোক।’

মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান খোকন বলেন, ‘ভাগ করা হলে যদি দলীয় কাজে গতিশীলতা আসে তাহলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। কিন্তু আগে দেখতে হবে,কোন পথে গেলে দলের লাভ বেশি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হতে পারে।তবে কবে ও কোন সময় কমিটি ঘোষণা করা হবে তা একমাত্র বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই বলতে পারবেন।’

আগের আহ্বায়ক কমিটিরও একই দশা

২০১১ সালে ১৪ মে ঢাকার সাবেক মেয়র ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে মহানগরের কমিটি করে বিএনপি। এরপর ছয় মাসের মধ্যে সর্বস্তরের কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। এরপর গত ২০১৪ সালের ১২ মার্চ মহানগরের পদ ছাড়েন খোকা।



মন্তব্য চালু নেই