খাল দখলমুক্ত ও ঘের বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারক লিপি প্রদান

সাতক্ষীরা জেলা শহরের অদূরে মাছখোলা গ্রাম সংলগ্ন ডায়ের খাল অবৈধ দখলকারীদের কবল থেকে উদ্ধার এবং ডায়ের বিলের প্রায় ৬ হাজার বিঘা জমিতে নোনা পানির চিংড়ি ঘের বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারক লিপি দেয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে স্থানীয় লোকজন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের মাধ্যমে ওই স্বারক লিপি পেশ করেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো ওই স্বারক লিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা শহরের অদূরে সাতক্ষীরা-মাছখোলা সড়কের পাশে প্রায় ৬ হাজার বিঘা আয়তনের ‘ডায়ের বিল’ এর চারিপাশ দিয়ে ভেড়িবাঁধ দিয়ে দখল করে নিয়েছে এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল।

এই বিলে বছরে দুই ফসল ফলে। এক মাস আগে থেকে খন্ড খন্ড ভেবিবাঁধ দিয়ে পুরো বিল প্রস্তুত করা হচ্ছে নোনা পানির চিংড়ি চাষের জন্য। বিলের মাঝ দিয়ে প্রভাহিত সাড়ে ৪ কিলোমিটার লম্বা সরকারী ডায়ের খালটিও সম্পূর্ন দখল করে নিয়েছে তারা। ফলে সাতক্ষীরা জেলা শহর, সাতক্ষীরা পৌরসভা, লাবসা,বল্লী, ধুলিহরসহ আশপাশের ৫টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০টি গ্রাম ও ২০টি বিলের পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

এই ডায়ের খাল এবং বিল দিয়েই এসব এলাকার পানি নিস্কাশন হয়ে পাশ্ববর্তী বেতনা নদীতে গিয়ে পড়ে। অপরিকল্পিতভাবে ভেড়ি বাঁধ নির্মাণ করায় শতাধিক কালভাট দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্বার্থন্বেষী মহলের কারণে ডায়ের বিল ও খাল দিয়ে পানি নিস্কাশন না হলে এলাকার প্রায় তিন লক্ষ মানুষের জীবনেনাভিশ্বাস বয়ে আনবে।

স্থানীয়রা জানান, নোনা পানির চিংড়ি চাষের জন্য ডায়ের বিল ভেড়িবাঁধ দিয়ে চারিপাশে ঘিরে ফেলায় এলাকায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ পড়েছে হুমকীর মুখে। গৃহপালিত পশু বিশেষ করে হাজার হাজার গবাদিপশু চারণ ভূমী নষ্ট হয়ে পড়েছে। ঘাস জাতীয় গোখাদ্য গরু, ছাগল পালন এবং গরুর দুধ উৎপাদন হচ্ছে না। এলাকার প্রায় বিশ হাজার কৃষক কর্মহীন শ্রমীকে পরিণত হয়ে পড়েছে । এইসব ভূমি দস্যুদের দাপটে প্রান্তিক চাষিরা পরিণত হচ্ছে ভূমিহীন দিনমজুরে । এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে । প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তারা নানা ভাবে হুমকী দিচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, মাছখোলা গ্রামের আব্দুর রহমান, রাজারবাগান গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, ঘুটিরডাঙ্গী গ্রামের আয়ুব আলী, বদ্দিপুরের বাবু, রাজারবাগানের জাহাঙ্গীর,নূর আলী, আনসার আলীসহ বেশ কয়েক জন জোরপূর্বক চিংড়ি ঘের করছে। ফসলি জমিতে চিংড়ি চাষ করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামূলক হলেও তা নেয়া হয়নি। এলাকার প্রভাবশালীরা রাতারাতি বিলের ভিতর ভেড়িবাঁধ দিয়ে দখল করে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে চিংড়ি ঘের কমিটির সাধারন সম্পাদক আয়ুব আলী ও সদস্য আব্দুর রহমান জানান, চিংড়ি ঘের করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয় তা আমাদের জানাছিল না। প্রয়োজনে প্রশাসনের অনুমতি নেয়া হবে। ডায়ের খাল দখলের কথা স্বীকার করে বলেন, যারা দখল করেছে তাদের কে খালের জায়গা ছেড়ে দিয়ে ভেড়িবাঁধ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ধুলিহর মৌজার তহশীলদার রফিকুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ৩ তিন আগে সরেজমিন তদন্তে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সরকারী খাল সমম্পূর্ন দখল করে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি গত ৮ জুন লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ পেলে যারা চিংড়ি ঘের করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানান, সম্প্রতি বিষয়টি তার নজরে আসার পর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্র্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে যারা এভাবে সরকারী খাল দখল করেছে এবং ফসলী জমিতে চিংড়ি চাষের উদ্যোগ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সদর ইউএনও কে ইতিমধ্যে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে চিংড়ি ঘের করার অনুমতি দেয়া হবে না বলেও তিনি জানান।



মন্তব্য চালু নেই