খুনের আগে ফোন : মা আমাকে বাঁচাও, ওরা মেরে ফেলবে!

ফুটফুটে মায়াবী মুখের এক মেয়ে মেঘলা। বাবা-মার একমাত্র সন্তান। খুব আদরের। কৈশোরের উচ্ছলতা না কাটতেই বিয়ে হয়ে যায়। জীবনের জটিলতা বোঝার আগেই সংসার আষ্টেপিষ্ঠে বেঁধে ফেলে। তবে তাও ভালো হতো যদি জীবন সঙ্গী হতো নির্লোভ-স্বার্থহীন। কিন্তু তা হয়নি। তাই বছর দুয়েক সংসার করার পর একদিন ঘটলো সেই নির্মম ঘটনা।

মেঘলা তার মাকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন, ‘মা আমাকে বাঁচাও, ওরা আজ আমাকে মেরে ফেলবে। আমি হাঁটতে চলতে পারছি না। আমাকে লাঠি দিয়ে মেরে রক্তাক্ত করেছে ইমরান। আমি অচল। কীভাবে পালিয়ে যাবো? মা, আমাকে বাচাও’।

মৃত্যুর আগে মাকে ফোন করে ঠিক এভাবেই আকুতি জানিয়েছিলেন মেঘলা। কিন্তু আকুতি জানালে কী হবে, বাবা-মা তাদের অতি আদরের মেয়েকে রক্ষা করতে পারেননি। তার আগে যৌতুকলোভী স্বামীর হাতে জীবন দিতে হলো ভোলার মেয়ে ফাতেমাতুজ জহরা মেঘলাকে (২৩)।

গেল সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার গ্রামে স্বামী ইমরান ওরফে এনামের (৩০) বাড়িতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়নায় ঝুলানো মেঘলার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মেঘলা ভোলা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল সড়কের শহীদুল হক টিটুর একমাত্র আদরের মেয়ে। আর ইমরান লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার ৩নং ওয়ার্ডের সবুজগ্রামের শাজাহান মাস্টারের ছেলে। ২০১৩ সালে সামাজিকভাবে দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়।

মেঘলার পরিবারের অভিযোগ, তাদের একমাত্র মেয়েকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করে আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মেঘলার বাবা-মা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় মেঘলাকে যৌতুকের জন্য মারধর করতো স্বামী ইমরান। ঘটনার দিন (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে মেঘলাকে মারধর শুরু করে ইমরান ও তার পরিবারের লোকজন। মেঘলার ডাক-চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলেও তাদের ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি ইমরানের পরিবার। তখনই মেয়েটির মৃত্যু হয়। এরপর ইমরান নিজেকে রক্ষা করার জন্য মেঘলাকে ঘরে আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।

ওইদিনই মেঘলার মৃত্যুর খবর পেয়ে আত্মীয় স্বজন ও রামগতি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়না তদন্তর জন্য লক্ষ্মীপুর সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় মেঘলার বাবা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে রামগতি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার ৩নং আসামি শাজাহান মাস্টারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

এদিকে, ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে মেঘলার আত্মীয় স্বজনের কাছে লাশটি হস্তান্তর করে পুলিশ। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রামগতি উপজেলা থেকে ভোলায় এনে পারিবারিক কবরস্থানে মেঘলার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

জানতে চাইলে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন ঘটনার সততা নিশ্চিত করে সোনালীনিউজকে জানান, মেঘলার বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ৩নং আসামি শাজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।



মন্তব্য চালু নেই