খুলনার পাটকল শ্রমিকরা ফের লাগাতার অবরোধে

‘প্রয়োজনে রক্ত দেব, পাঁচ দফা বুঝে নেব’ স্লোগানে সোমবার সকাল থেকে আবারও লাগাতার রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন খুলনা অঞ্চলের সাত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা।

প্রশাসনের আশ্বাসেও দাবি পূরণ না হওয়ায় তিন দিন স্থগিত থাকার পর সোমবার সকাল ৬টা থেকে তারা খুলনার নতুন রাস্তা মোড়সহ খুলনা-যশোর মহাসড়কের তিনটি স্থান এবং রেলপথে অবস্থান নিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।

এর আগে ৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে শ্রমিকরা তাদের চলমান অবরোধ কর্মসূচি তিন দিনের জন্য স্থগিত করলেও ধর্মঘট অব্যাহত ছিল। কিন্তু দাবি পূরণের বিষয়ে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ধর্মঘটের সঙ্গে আবারও অবরোধ যুক্ত হলো।

এদিকে, অবরোধের কারণে খুলনা-যশোর মহাসড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। বন্ধ রয়েছে রেল যোগাযোগ। ফলে এ সড়কে চলাচলরত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

শ্রমিকরা নতুন রাস্তার মোড়ে রাজপথ-রেলপথ এবং আটরা গিলাতলা শিল্পাঞ্চল ও যশোরের রাজঘাট এলাকায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়েছেন। তারা সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে স্লোগান, বক্তৃতা এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করছেন। মাথায় হাঁড়ি এবং হাতে থালা-বাসন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছেন তারা।

খুলনার খালিশপুরের প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট, দিঘলিয়ার স্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইস্টার্ন, নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক অবরোধে যোগ দিয়েছেন।

শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- পাটশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মিলগুলোকে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনমুখী করতে পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়, পে-কমিশনের ন্যায় অবিলম্বে শিল্প শ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন বোর্ড গঠন, ২০১৩ সালের ১ জুলাই ঘোষিত ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান এবং খালিশপুর, দৌলতপুর, কর্ণফুলী জুট মিলের শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ সব পাওনা পরিশোধ।

রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রশাসনও আশ্বাস পূরণ করতে পারেনি। ফলে এখন আর শ্রমিকরা আশ্বাসে ভুলবে না। ৫ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সালাম জমাদ্দার জানান, পাটকল শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে ৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১০ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের বিষয়ে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অবরোধ তিন দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। কিন্তু তিন দিনের মধ্যে কোনো সমাধান না হওয়ায় তারা আবারও অবরোধে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

খুলনা রেলস্টেশনের মাস্টার কাজী আমিরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে রেলপথে অবস্থান নেওয়ায় খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ সকাল ৬টা থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে। অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেল যাওয়া-আসা করতে পারছে না। ফলে যাত্রীরা স্টেশনেই অপেক্ষা করছেন।

প্রসঙ্গত, খুলনা অঞ্চলের স্টার জুটমিল, প্লাটিনাম-জুবিলী জুট মিল, ক্রিসেন্ট জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, খালিশপুর জুট মিলসহ সাতটি পাটকল শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ভাতাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ৪ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন। পাশাপাশি ৫ এপ্রিল থেকে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। এতে পাটকলগুলো অচল হয়ে পড়েছে।



মন্তব্য চালু নেই