গঠনের পর থেকে জ্বলছে শ্রমিক দলের কমিটি

প্রায় আড়াই বছর আগে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার পরপরই শ্রমিক দলে শুরু হয় অন্তঃকোন্দল। একটি পক্ষ ঘোষণা করে পাল্টা কমিটি। অনেক জায়গায় কমিটি নিয়ে ক্ষোভ রূপ নেয় সংঘর্ষে। আবার কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ভাঙচুর করা হয় কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়। লাঞ্ছিত হন কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তাতে ওই সময় কিছুদিন কার‌্যালয়ের দিকে পা বাড়াননি নেতারা।

শুরু থেকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও এর সুষ্ঠু সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ রয়ে গেছে শ্রমিক দলের নানা পক্ষে। গত এপ্রিলে বর্তমান কমিটির দুই বছর মেয়াদ পার হলেও এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি বিএনপির এই শ্রমিক সংগঠনে। ফলে দলীয় কর্মসূচিতে আগের মতো সক্রিয়তা দেখাতে ব্যর্থ হয় তারা।

ক্ষুব্ধ নেতারা বলছেন, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি করায় ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে শ্রমিক দল। দলীয় কর্মসূচি কিংবা আন্দোলন-সংগ্রামে নেই আগের মতো সক্রিয়তা। এমনকি দলের ভেতরেও এর অবস্থান আর আগের মতো নেই।

ইতিমধ্যে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা করছেন পদ-প্রত্যাশীরা। তবে খুব শিগগির সংগঠনটির কমিটি বদল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান বর্তমান কমিটির নেতারা।

২০১৪ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের তিন দিন পর আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি, নুরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক ও জাকির হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কমিটি ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে সভাপতি ও আবুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে ৩৫ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করে শ্রমিক দলের একাংশ। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন উত্তপ্ত ছিল সংগঠনটির রাজনৈতিক ময়দান।

আবুল খায়ের খাজার অভিযোগ ছিল, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের নিদের্শনা দিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, নজরুল ইসলাম খান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান একটি ‘পকেট কমিটি’ ঘোষণা করেন।

কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা নিয়ে যখন ক্ষোভ-বিক্ষোভ, তখন সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা নিয়ে শুরু হয় চরম উত্তেজনা। সভাপতি পদে কাজী আমির খসরু ও মো. সুমন ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মো. মাহাবুব আলম বাদল ও মো. বদরুল আলম সবুজের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব চলে।

এ নিয়ে কয়েকবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুর করাসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি সংগঠনটি।

মহানগর শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর নুরুল ইসলাম খান নাসিম তার পছন্দের লোকদের শীর্ষ পদে রাখার জন্য নানাভাবে কারসাজি করছেন বলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নুরুল ইসলাম নাসিম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে। এতে কারো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ ছিল না। যা বলা হচ্ছে, এসব মিথ্যা অভিযোগ।’

অন্যদিকে শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা বদরুল আলম সবুজের অভিযোগ ছিল, তারা সারা বছর রাজনীতি করেন, আর কমিটি গঠনের সময় এলে নেতারা টাকাওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে কমিটি করবেন, তা হবে না। মহানগর দক্ষিণের কাউন্সিলের আগের দিন বাড়তি ৪০ জনকে ভোটার করা হয়েছে তাদের না জানিয়ে। শুধু তাই নয়, টাকাওয়ালা নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের নেতা বানানো হয়েছে।

শ্রমিক দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংগঠনের শীর্ষ পদে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি করায় দলের মধ্যে তাদের ভাবমূর্তির সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে বিএনপিতে এখন শ্রমিক দলের প্রভাব নেই। নেতারাও আগের মতো মূল্যায়ন পান না। তাই আগামী দিনে ত্যাগী,গ্রহণযোগ্য নেতাদের দিয়ে কমিটি করার দাবি তাদের।

কেন্দ্রীয় একজন সহ-সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘বর্তমান সভাপতির চট্টগ্রাম অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয়তা থাকলেও ঢাকায় তিনি সুবিধা করতে পারেননি। আর সাধারণ সম্পাদকদেরও পরিচিতি কম থাকায় গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি তারা। এরই প্রভাব পড়েছে সংগঠনে। এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। না হলে অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে।’

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় শিগগিরই শ্রমিকদলের উপদেষ্টা ও সাবেক নেতাদের নিয়ে বর্ধিত সভা করার চেষ্টা চলছে। সেখানেই সম্মেলনের দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।

নতুন কমিটিতে বর্তমান সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবার এই পদে থাকার চেষ্টা করছেন। সে ক্ষেত্রে তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিদ্রোহী নেতা আবুল খায়ের খাজাকে রাখতে চাচ্ছেন বলে গুঞ্জন চলছে।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও মোস্তাফিজুর রহমান আগ্রহী বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া আরেক সহ-সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রামের নুরুল্লা বাহারও সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী বলে জানা গেছে।

শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম নতুন কমিটির ব্যাপারে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুত। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি চূড়ান্ত করব। আমরা নির্ধারিত সময়ে কমিটি দেয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’

সংগঠনে কোনো বিরোধ নেই এমন দাবি করে নাসিম বলেন, ‘সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও আমরা বিএনপির অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের চেয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ভালো ভূমিকা রাখতে পেরেছি বলে মনে করি।’



মন্তব্য চালু নেই