গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানানসই ও গঠনমূলক শিক্ষাব্যাবস্থাই মূল লক্ষ্য

গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি (সাভার) : মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় মানানসই ও গঠনমূলক শিক্ষাব্যাবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। দেশের ডিজিটালাইজেশনের সাথে হাত মিলিয়ে শিক্ষার সঠিক মান জোরদারভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই সাভারের মির্জানগরের নলামে প্রকৃতির নয়নাভিরাম পরিবেশে ৩২ একর জায়গা জুড়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়।

৩১ সদস্যবিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে শুরুতেই। আলাদা একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও খেলার মাঠ সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টি পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য শিক্ষামূলক এবং জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ধারায় সঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপ আনায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে প্রথম থেকেই।

সেই ধারা বহাল রেখে এখনো এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড। এমনটাই দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। বুধবার(১৫ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্তজা আলী বাবু, সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মোহাম্মদ মোকাম্মেল ও পাবলিক রিলেশন কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।

এ সময় গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি(গবিসাস)-র সভাপতি মাসুদ আজীম ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী তারেকের নেতৃত্বে গবিসাসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আসিফ আল আজাদ ও উপদেষ্টা ওমর ফারুক সোহানসহ সকল সদস্যরা উপস্থিত ছিল।

আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ও সম্ভাবনাময় কর্মকাণ্ডগুলো ছাড়াও অনিয়ম অব্যাবস্থাপনা ও সমস্যার দিকগুলো প্রাধান্য পায়।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইবেল হচ্ছে তার প্রসপেক্টাস। প্রসপেক্টাসে প্রণিত সকল নিয়ম-কানুন, তথ্য ও সিধান্তকে পূর্ণ মর্যাদার সাথে মেনে কাজে ও কথায় একই থাকার দৃঢ় প্রত্যয়ে চলছি আমরা। তার সাথে নতুন নতুন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।“ বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন।

শিক্ষার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনার প্রয়াসে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের অঙ্গিকার দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কাজ সম্পন্ন করতে আগামী জুলাই মাসকে সময়সীমা হিসেবে নির্ধারিত করেছে প্রশাসন।

এছাড়া চলতি সেশনে শিক্ষার্থী সংকটের কারণ হিসেবে র‍্যাগিংকে দ্বায়ী করা হয়। র‍্যাগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের সাড়া দিতে প্রসপেক্টাস অনুসারে শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়। সে লক্ষ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া র‍্যাগিং-র শাস্তি প্রদানে সিএসসি বিভাগের ১৯জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কারাদেশ প্রদান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে কার্য সম্পাদন করা হচ্ছে বলে বলা হয়।

এ বিষয়ে আবু মোহাম্মদ মোকাম্মেল বলেন-“শুধু জরিমানায় এ অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর তাই অন্য কোন পদক্ষেপের কথা ভাবছি আমরা। এর পূর্বেও ফার্মেসী বিভাগের শাস্তি শিথিল করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করেছি। র‍্যাগিং-এর নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষায় শাস্তি শিথিলের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে এখন থেকে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক, প্রশাসনিক ভবন, ট্রান্সপোর্ট এরিয়া ও একাডেমিক ভবনের সকল বিভাগেও সিসি ক্যামেরার আওয়ায় আনার কথাও তুলে ধরা হয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের অপকর্ম ও অপরাধ গুলো প্রতিরোধে প্রশাসন এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করছে বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্তজা আলী বাবু।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা দরিদ্র ও মেধাবী। তাদের জন্য দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের রেয়াত প্রদানের সিদ্ধান্তে উপণিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মাধ্যমে তাদের সঠিক মূল্যায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি’র মেয়াদকাল শেষ হবে আগামী ২৯ জুলাই। নতুন ভিসির মনোনয়ন রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

বিশেষ সংকট হিসেবে ফার্মেসী ও রসায়ন বিভাগের ল্যাবের মেয়াদত্তীর্ণ কেমিক্যাল, ক্যান্টিনে খাবারের নিম্নমান ও উচ্চ দাম এবং লাইব্রেরী খোলা থাকার সময় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন-“ল্যাবের মেয়াদ উত্তীর্ণ কেমিক্যালের ব্যাবহার সম্পর্কে আমরা অবহিত ছিলাম না। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। ক্যান্টিনের খাবারের মান ও দাম নিয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা দেখছেন বিষয়টা। এবং ঈদের ছুটির পর থেকে লাইব্রেরী রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।”

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, খেলাধুলা, ডিবেট, বিভিন্ন আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা, সামাজিক দায়বদ্ধতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড ও শিক্ষা বিষয়ক গবেষণার কাজের দায়িত্ব গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে। যে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাজেট শিক্ষার্থীদের মতামতের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়।

সম্প্রতি শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।



মন্তব্য চালু নেই