গম এখন গলার কাঁটা

ক্ষেতে থাকলে গমের কাঁটা দৃশ্যমান থাকে। ক্ষেত থেকে তুলে গম মাড়াইয়ের আগ পর্যন্তও কাঁটার অস্তিত্ব থাকে। মাড়াই-পরিষ্কারের পর গম থেকে কাঁটা দূর হয়। কিন্তু বিদেশী গমের অদৃশ্য কাঁটা গলায় আটকেছে খাদ্যমন্ত্রীর। যদিও তিনি তা স্বীকার করতে রাজি নন।

ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ৪০০ কোটি টাকার গম কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহেও কারচুপির মাধ্যমে দলীয় নেতার্মীদের আর্থিক লাভের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে।

গত অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন খাদ্য অধিদফতরের গম সংগ্রহ অভিযানেরও শেষ দিন ছিল। ওই দিন ত্রিশ হাজার টন গম সংগ্রহের অস্বাভাবিক রেকর্ড সৃষ্টি হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে খাদ্য অধিদফতর থেকে চার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ফয়েজ আহমেদ।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের আর্থিকভাবে লাভবান করতে বাড়তি দামে এ সব গম কেনা হয়েছে। তবে খাদ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে জবাব না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।

এদিকে শনিবার সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর খাদ্য গুদামে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম ঢুকানো হচ্ছে— এমন খবরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য সেই গম গুদামে ঢুকাতে দেননি।

সংসদ সদস্য আবদুর রউফের মন্তব্য— ‘আমি নিজেই দেখতে পাচ্ছি, এটি নিম্নমানের গম, তাই এগুলো গোডাউনে যাবে না।’

কুমারখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমিরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা রাতে জানতে পারি নিম্নমানের পচা গম কুমারখালীতে গুদামজাত করা হবে। জানার পর রাতেই সংসদ সদস্য আব্দুর রউফকে বিষয়টি অবহিত করি। আমরা জানাই, এ গম খাওয়ার অনুপযোগী। এটি গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ গম গুদামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।’

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই গম তখনও গুদামে রাখতে দেওয়া হয়নি।

কিন্তু এসব অভিযোগের দায়িত্ব নিতে রাজি নন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। শনিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে কামরুল ইসলামের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সব বিষয় আমার না। এগুলো খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের। তার সঙ্গে কথা বলেন।

মন্ত্রী হিসেবে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা খাদ্য অধিদফতরের বিষয়। আমি কোনো মন্তব্য করব না। ডিজি ফুডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি সব জানেন।’

কুষ্টিয়ার গুদামে এক সংসদ সদস্য ‘পচা’ গম ঢুকানোর প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছেন— এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এইটাও ডিজির কাছে জানতে পারবেন। তাকে ফোন দেন। ডিজির নাম্বার আছে না আপনার কাছে?’

এরপর খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ‘পচা গম’ কথাটির বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের গুদামে কোনো পচা গম নেই। গমের মানটা হয়ত একটু খারাপ কিন্তু গম পচা নয়।’

তবে কুষ্টিয়ায় ‘পচা গম’ এই অভিযোগে এক সংসদ সদস্য গুদামে গম ঢুকানো বন্ধ করে দিয়েছেন বলে যে খবর পাওয়া গেছে তা তিনি জানেন না জানিয়ে বলেন, ‘এইটার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। এ বিষয়টা এখানো আমি জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘একদিনে ৩০ হাজার টন খাদ্য সংগ্রহের বিষয়ে চার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে আমরা ব্যাখ্যা চেয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলেছি।’

ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে অস্বাভাবিক গতিতে গম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে চিঠি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব দেব।’ দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই