গরুর মাংস খাওয়ার উৎসব ভারতের কলেজে

ভারতের দারদিতে গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে প্রকাশ্যে গরুর মাংস খেয়ে প্রতিদিনই এই ঘটনার প্রতিবাদ করা হচ্ছে। কেরালা রাজ্যের ত্রিশুর শহরের শ্রী কেরালা ভার্মা কলেজের শিক্ষার্থীদের উৎসবের পর এবার এই উৎসব করেছে মহারাজা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

দারদি হত্যাকাণ্ড ও কেরালা ভার্মা কলেজের প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের বরখাস্তের প্রতিবাদ জানাতে এই আয়োজন করা হয়েছে বলে জানায় মহারাজা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই আয়োজনের একটাই লক্ষ্য ছিল, আর সেটা হলো, যত বেশি পরিমাণ সম্ভব শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানো। উৎসবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রুটির সঙ্গে গরুর মাংস পরিবেশন করা হয়।

সেই সময় ক্যাম্পাসে যত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন তাঁরা প্রায় সবাই এর স্বাদ নেন। গরুর মাংস খাওয়ার এই উৎসবে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই উৎসব কোনো রকম বাধা বিঘ্ন ছাড়াই শেষ হয়।

এদিকে গত ১ অক্টোবর কেরালা ভার্মা কলেজে গরুর মাংস খাওয়ার উৎসব আয়োজন করে প্রতিবাদ করায় ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে এই প্রতিবাদে নিজের সমর্থনের কথা ফেসবুকে লেখায় কলেজের সহযোগী অধ্যাপক টি এস দীপার ওপর খেপেছে কলেজটির ট্রাস্টি বোর্ড ও কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক দীপার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ।

দারদিতে গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে কলেজটিতে গরুর মাংস উৎসব আয়োজন করে কেরালা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। তবে শিক্ষার্থীদের এই উৎসবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় কলেজের সহযোগী অধ্যাপক দীপার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত ১ অক্টোবর শ্রী কেরালা ভার্মা কলেজের একদল শিক্ষার্থী অন্যদের মাঝে রান্না করা গরুর মাংস বিতরণ করে।

এদের মধ্যে ছয় শিক্ষার্থীকে গত ৫ অক্টোবর বরখাস্ত করা হয়। কারণ হিসেবে কলেজ ক্যাম্পাসে শাকাহারীরা খেতে পারেন না- এমন সব ধরনের খাবার পরিবেশন নিষিদ্ধ বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক দীপা কলেজ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট লেখেন। দীপা লেখেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মন্দিরের মতো নিয়ম মেনে চলা উচিত না।

যেসব শিক্ষক গরুর মাংস খাওয়ার উৎসবের পক্ষে কথা বলবেন তাঁদের বরখাস্ত করা হবে বলে আমি বুঝতে পারছি। যদি এমন হতো যে এই তালিকায় প্রথম নামটাই থাকবে আমার।’ তবে পরে পোস্টটি মুছে ফেলেন বলেও জানান দীপা। গরুর মাংস খাওয়ার উৎসবকে সময়ের দাবি বলে লেখা দীপার ফেসবুক পোস্টে সহমত জানিয়ে অসংখ্য মন্তব্য জমা হয়। অনেকেই তাঁর সঙ্গে সংহতি জানান।

এদিকে দীপার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের প্রেসিডেন্ট এম পি ভাস্কারান নায়ার। তবে দীপা যা লিখেছেন তাও লেখা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। ডেকান হেরাল্ড পত্রিকাকে নায়ার বলেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে শাকাহারীরা খায় না এমন খাবার নিয়ে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। এটা যখন করা হয় হলে দুই দল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ রকম অবস্থায় একজন শিক্ষক যখন একদল শিক্ষার্থীর পক্ষ নেন তখন সেটা সঠিক নয়।’



মন্তব্য চালু নেই