গর্ভাবস্থায় উদ্বেগ কাটিয়ে উঠবেন কীভাবে?

প্রথমার সন্তান আসতে চলেছে রাজন্যার৷ নবাগত অতিথির কথা শুনে বর তো খুশি৷ বাড়িতেও যেন আন্দদের ফুলঝুড়ি৷ যত্ন, আত্তি বেড়ে গিয়েছে৷ বংশের প্রথম সন্তান যে তার কোলেই৷

আনন্দের মাঝেই হঠাৎ করে কিছুদিন ধরে নানারকম দুশ্চিন্তা মাথায় আসতে শুরু হয়েছে রাজন্যার৷ মাঝেমধ্যে ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে? আচমকা একদিন রাজন্যার মনে হল আচ্ছা যদি তাদের সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়? যদি জন্ম থেকে জটিল রোগের শিকার হয়? কখনও বা মাথায় আসতে থাকে, যদি সন্তানকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়? কিছুদিন আগেই তো একজনের হয়েছিল৷ কখনও বা মনে হয় সন্তানের পিছনেই তো সে আটকা পড়ে যাবে? মাঝেমধ্যে হইহুল্লোড় সপ্তাহান্তে ঘুরতে যাওয়া, সব ছেড়ে এভাবে কী করে জীবন কাটবে?

রাজন্যার মতো হাজারও প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকে প্রায় সমস্ত সন্তানসম্ভবা মহিলাদেরই৷ ক্রমশ নানা রকম ভয় চেপে বসে৷ আর কারও যদি উদ্বেগ, হতাশার সমস্যা আগে থেকে থাকে, তা হলে গর্ভাবস্থায় সেটা অনেক সময় হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক৷ উৎকণ্ঠা এ সময় ডূড়ান্ত হয়ে উঠলে তাতে ক্ষতি হতে পারে গর্ভস্থ সন্তানের বিকাশে৷

কী ভাবে আটকাবেন এই উদ্বেগ?

তারা আগে জানা দরকার কেন হয় উদ্বেগ? এর যথাযথ উত্তর মনোবিদদের কাছেও নেই? উদ্বেগের সমস্ত কারণ এখনও বের করতে পারেননি মনোবিদরা৷ যেমন একই সমস্যা কারও কাছে সহজ, কারও কাছে একটু কঠিন আবার কারও কাছে ভয়ঙ্কর কঠিন হয়ে ওঠে৷ কেন তার ব্যাখ্যা তাঁদের কাছে নেই৷

তবে গর্ভাবস্থায় ভবিষ্যত সম্পর্কে দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠার অন্যতম কারণ হল শরীরে বিভিন্ন হরমোনের কমা-বাড়া৷ চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে যে সমস্ত হরমোন তাদের কম-বেশি ক্ষরণে উৎকণ্ঠা হয়ে থাকে৷

উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে

কথা বলুন: মনের কথা বলতে পারেন এমন কারও কাছে সমস্যা, কী নিয়ে ভয় পাচ্ছেন সেগুলি বলুন৷ যদি এমন কোনও বন্ধু, আত্মীয় থাকে যিনি মা হয়েছেন, তাঁর কাছে এ ব্যাপারে কথা বলুন৷ তবে গর্ভাবস্থায় যদি উৎকণ্ঠা ভীষণ বেড়ে যায়, প্যানিক অ্যাটাক হতে শুরু করে মানে ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুক ধরফর করা, প্রচণ্ড ঘাম, মাথায় কষ্ট তা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া নিন৷ প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না৷

লম্বা শ্বাস: যখন নিজেকে অসহায়, উদ্বিগ্ন মনে হবে তখন চুপ করে বসে ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নিন ও ছাড়ুন৷ শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ এতে বাড়বে৷ শরীর সুস্থ লাগবে৷

ব্যায়াম : চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করলে মন শান্ত থাকবে৷ যোগ ব্যায়াম এক্ষেত্রে খুব উপযোগী৷

ভিটামিন সি: মুসাম্বি লেবু, টাটকা ফলের রস এইসময় খেলে শরীর ভাল থাকবে৷ আবার হতাশা, উৎকণ্ঠা নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল উপকারী৷

ভাললাগার জিনিস: উদ্বেগ কাটাতে খারাপ চিন্তা জোর করে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন৷ মন খারাপ হওয়া শুরু হলে যার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে তার সঙ্গে কথা বলুন৷ যদি কম্পিউটার গেম খেলতে ভাল লাগে বা গান শুনতে তাই করুন৷ বইও পড়তে পারেন৷ মোট কথা ভাল লাগার বিষয়ে তখন মন দিতে হবে৷ হাল্কা কিছু ঘরের কাজকর্ম করাও এই সময় ভাল৷

যদি এই সব করেও দুশ্চিন্ত না যায়, তা হলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷ মনে রাখবেন, শরীরের পাশাপাশি মনও খারাপ হতে পারে৷ এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ আর মনোচিকিৎসকের কাছে কাউন্সেলিং-এ লজ্জা বা ভয় নেই৷ আসল কথা সুস্থ থাকা৷ সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়া৷



মন্তব্য চালু নেই