গর্ভাবস্থায় খিঁচুনির (প্রিএক্লাম্পশিয়া) লক্ষণ সমূহ

একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেন তখন তাকে বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় যেমন- রক্তস্বল্পতা, জন্ডিস, খিঁচুনি, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। গর্ভাবস্থার খিঁচুনি একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। একে ডাক্তারি ভাষায় প্রিএক্লাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া বলা হয়। গর্ভাবস্থার খিঁচুনির ফলে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

গর্ভাবস্থার খিঁচুনি হওয়ার কারণ :

সাধারণত প্রথম বার মা হওয়ার সময়, ওজন বেশি হলে, ২০ বছরের কম বয়সে গর্ভধারণ করলে বা বয়স ৪০ এর বেশি হয়ে যাওয়ার পর গর্ভধারণ করলে, উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যায় ভুগলে, গর্ভে একের অধিক সন্তান থাকলে, ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা থাকলে এবং পরিবারের কারো একলাম্পশিয়া হয়ে থাকলে প্রিএকলাম্পশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

প্রায় ৫ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীই প্রিএকলাম্পশিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। দুর্ভাগ্যবশত এর তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এজন্য প্রতিবার ডাক্তারের সাথে দেখা করার সময় আপনার রক্তচাপ মাপা এবং প্রস্রাবের প্রোটিন পরীক্ষা করানো জরুরী।

গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহ পরে প্রিএকলাম্পশিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এটি গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে যে কোন সময়, প্রসবের সময়, এমনকি প্রসবের পরেও হতে পারে – বিশেষ করে প্রসবের পরের প্রথম ৪৮ ঘন্টায়। এটি মাঝারি থেকে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে এবং আস্তে আস্তে বা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

গর্ভাবস্থার খিঁচুনি বা প্রিএকলাম্পশিয়ার লক্ষণগুলো হচ্ছে :

১। শরীরে পানি আসা

সাধারণত শরীরে পানি আসাই হচ্ছে প্রিএকলাম্পশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। যদি আপনার মুখ ও চোখের নীচে ফোলা দেখতে পান, হাত যদি সামান্য ফুলে যায় বা আপনার পায়ের পাতা ও গোড়ালি যদি হঠাৎ করেই ফুলে যায় তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। শরীরে পানি জমে যাওয়ার কারণেই এমন হয় বলে ওজন ও বৃদ্ধি পায়। যদি আপনার ওজন সপ্তাহে ৪ পাউন্ডের বেশি বৃদ্ধি পায় তাহলে তাও জানাতে হবে চিকিৎসককে। তবে মনে রাখবেন সব অন্তঃসত্ত্বা নারীরই প্রিএকলাম্পশিয়া হলে শরীরে ফুলে যায় না বা ওজন বৃদ্ধি পায় না।

২। তীব্র মাথাব্যথা হওয়া

প্রিএকলাম্পশিয়ার ক্ষেত্রে গর্ভবতী মা তীব্র মাথাব্যথার সমস্যায় ভুগতে পারেন। ঘন ঘন মাথা ব্যথায় ভুগতে পারেন গর্ভবতী নারী।

৩। দৃষ্টি শক্তির সমস্যা

দৃষ্টি শক্তির সমস্যা হলে যেমন- দ্বৈত দৃষ্টির সমস্যা, ঝাপসা দেখলে, চোখের সামনে কোন দাগ দেখা যায় বলে মনে হলে বা আলোর ঝলকানি দেখা দিলে, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা গেলে এবং অস্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে তা প্রিএকলাম্পশিয়াকে নির্দেশ করে।

৪। পেটে ব্যথা

প্রিএকলাম্পশিয়ায় আক্রান্তদের উপরের পেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে।

৫। বমি হওয়া

গর্ভবতী নারী প্রিএকলাম্পশিয়ায় আক্রান্ত হলে বমি বমি ভাব ও বমি হতে দেখা যায়।

প্রিএকলাম্পশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো গর্ভাবস্থার সাধারণ সমস্যার মত মনে হতে পারে বলে তা বোঝা সম্ভব হয় না। এজন্য চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন। চিকিৎসক ব্লাড প্রেশার মাপবেন এবং ইউরিন টেস্ট করতে দেবেন। যদি ব্লাড প্রেশার বেশি দেখা যায় এবং প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি দেখা যায় তাহলে আপনার প্রিএকলাম্পশিয়া শনাক্ত হবে। যদি আপনার সিস্টোলিক রক্ত চাপ ১৪০ বা তার বেশি হয় এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৯০ বা এর বেশি হয় তাহলে ডাক্তার আরো কিছু পরীক্ষা করাতে দেবেন। গর্ভাবস্থায় ব্লাড প্রেশার উঠানামা করতে পারে বলে ব্লাড প্রেশার শুধু একবার মাপাই যথেষ্ট নয়।



মন্তব্য চালু নেই