গায়ে হলুদের আগেই বিয়ে ভাঙল পাত্রী, ভূরিভোজ ভেস্তে গেলেও খুশি গোটা গ্রাম (ভিডিও)

বয়স মাত্র ১৬ বছর। কিন্তু পরিবার চেয়েছিল এখনই বিয়ে দিয়ে দিতে। পাত্রপক্ষের সঙ্গে পাকা কথা বলে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিল মেয়ের বাড়ির লোক। শুরু হয়েছিল প্যান্ডেল বাঁধা। কিন্তু পাত্রীর যে এখনই বিয়ের ইচ্ছা নেই। হাজার অনুরোধেও বাড়ির লোককে বোঝাতে না পেরে বিয়ে ভাঙতে শেষ পর্যন্ত মোক্ষম চাল দিল ওই ছাত্রী। কারণ তাঁর স্বপ্ন আরও পড়াশোনা করা।

গায়ে হলুদের দিনেই নিজের বিয়ে আটকে দিল সন্তোষী গড়াই। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নিজের বিয়ে বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে প্রশাসনের কাছে চিঠি লেখে সে। তার সূত্র ধরেই মঙ্গলবার, সকালে পুরুলিয়া মফস্বল থানার পুলিশকে ও স্থানীয় বিডিওকে সঙ্গে নিয়ে ওই নাবালিকার বাড়িতে হাজির হন জেলা চাইল্ড লাইনের আধিকারিকরা। বিয়েবাড়ির আসরে হঠাৎ করে পুলিশ ও সরকারি আধিকারিকদের দেখে হুলস্থুল পড়ে যায়। প্রথম দিকে মেয়ের বয়স নিয়ে সন্তোষীর পরিবারের সঙ্গে সরকারি আধিকারিকদের তর্ক শুরু হয়। তবে প্রমাণ হয়ে যায় সে এখনও সাবালিকা হয়নি। এরপরও কিছুতেই এই বিয়ে আটকাতে চাননি সন্তোষীর বাবা সঞ্জিত গড়াই। তিনি বলেন বাড়ি ভর্তি আত্মীয় পরিজন। বিয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি সারা। ছেলের বাড়ি থেকে এসে পৌঁছেছে তত্ব। এই অবস্থায় কীভাবে বিয়ে আটকে দেওয়া যায়?

মেয়ের বাড়ির আপত্তি সত্ত্বেও পিছু হঠেননি চাইল্ড লাইনের কর্তারা। মেয়ের বাবা ও মা শকুন্তলাদেবীকে ডেকে বিডিও দিব্যেন্দু দাস, চাইল্ড লাইনের ঝর্ণা মুখোপাধ্যায়, দীপঙ্কর সরকার, শিশু সুরক্ষা ইউনিটের সমাজকর্মী অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়রা কম বয়সে বিয়ে হলে মেয়ের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা-সহ অসুবিধার দিকগুলি বোঝান। বাস্তবটা বুঝতে পেরে নরম হয়ে যান পরিজনরা। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে নাবালিকার বাবা মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সরকারি আধিকারিকদের সামনেই এদিন প্যান্ডেল খোলার কাজ শুরু হয়ে যায়। নিমন্ত্রিতরাও বিদায় নিতে শুরু করেন। গ্রামের মানুষজনও জানিয়ে দেন এমন ভুল এবার থেকে আর তাঁরা করবেন না। আবার লেখাপড়ার জগতে ফিরতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পুরুলিয়ার বেলগুমা বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সন্তোষী। সে বলে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন সে ছোট থেকেই দেখে। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি রয়েছে তার। আপাতত লক্ষ্য উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করার। বিয়ের কথায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সে। এবার আবার লেখাপড়ার জগতে ফিরতে পেরে সে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। মেয়ে হয়েও যে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করা যায়, তা দেখিয়ে দেবে সে।

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন



মন্তব্য চালু নেই