গুগলের সের্গেই ও ল্যারির কাতারে বদরুল

ইন্টারনেট-প্রযুক্তি ও কৌশল বিকাশে অবদানের জন্য ২০১৬ সালের সোল টেস্ট অব টাইম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাঙালি বিজ্ঞানী বদরুল মুনির সরওয়ার। তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন এ পুরস্কার পেয়েছেন। গত বছর থেকে চালু হওয়া এই পুরস্কার পেয়েছেন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেজ।

২০০১ সালে পিএইচডি গবেষণাকালে বদরুল মুনির সরওয়ার উদ্ভাবিত ‘আইটেমভিত্তিক কলাবরেটিভ ছাঁকনির সুপারিশের অ্যালগরিদম’-এর জন্য বদরুল মুনির এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপক জর্জ ক্যারিপিস, যোসেফ কনস্ট্যান্ট ও জন রিড এই পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রয়াত জন রিডের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বদরুল তাঁর গবেষণা সম্পন্ন করেছিলেন। ২০০৫ সালে লন্ডনের বিখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিস্ট এক নিবন্ধে তাঁর এই গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছিল। ইন্টারনেটের প্রাণ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ) কনফারেন্স গত বছর থেকে এই পুরস্কার প্রবর্তন করে। ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রকাশিত কালোত্তীর্ণ গবেষণা নিবন্ধের জন্য প্রথম বছর এই পুরস্কার পেয়েছিলেন সের্গেই ও ল্যারি। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত সের্গেই ও ল্যারির গবেষণা ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার ব্যাপারটির আমূল পরিবর্তন ঘটায়। বদরুল মুনিরের অ্যালগরিদমও বদলে দিয়েছে ইন্টারনেটের ‘সুপারিশব্যবস্থা’।
গতকাল শুক্রবার যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন ছাত্র বদরুল মুনির সরওয়ার বলেন, ‘গুগলের সের্গেই আর ল্যারির সঙ্গে একই পেজে আমার নাম থাকবে এ যে বড় আনন্দের ব্যাপার।’

প্রিয় ছাত্রের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘বদরুল মুনিরের ওই নিবন্ধের উদ্ধৃতি পাঁচ হাজারের বেশি। বাঙালি বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটি নিবন্ধে এর চেয়ে বেশি উদ্ধৃতি রয়েছে কেবল প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী জাহিদ হাসানের।’ অর্থাৎ বদরুলের গবেষণা প্রকাশের পর পাঁচ হাজার গবেষণায় তাঁর গবেষণা থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়। অধ্যাপক কায়কোবাদ মনে করেন, ‘এটি আমাদের দেশের বিজ্ঞানী গবেষকদের জন্য অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, গুগলের সেই নিবন্ধটির পরই এই নিবন্ধটি প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এটি আবারও আমাদের বিজ্ঞানীদের মেধা যে বিশ্বের অন্য বিজ্ঞানীদের চেয়ে কম নয়, তা প্রমাণ করেছে।’

মুন্সিগঞ্জের বদরুল মুনির সরওয়ার ১৯৯২ সালে বুয়েট থেকে স্নাতক হন। পরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ২০০১ সালে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। এরপর কিছুদিন একটি স্টার্টআপ ও পরে শপিং ডট কম নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ২০০৮ সাল থেকে ইন্টারনেট নিলাম প্রতিষ্ঠান ই-বেতে কাজ নেন। ২০১৫ সালে বদরুল মেশিন লার্নিং সায়েন্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন পেশাজীবীদের নেটওয়ার্ক লিংকডইনে। বর্তমানে লিংকডইনের পেইড সার্ভিসগুলোকে উন্নত করার কাজে নিয়োজিত তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক আবদুল গনি আর গৃহিণী জোবেদা খাতুনের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বদরুল মেজো। স্ত্রী ইফফাত কাজি কাজ করেন ওরাকলে। ১১ বছর বয়সী ছেলে শমিক সরওয়ারকে নিয়ে তাঁদের অবসর সময় কাটে।

বদরুলের কাজটি জটিল, কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তার সুবিধা ভোগ করছেন। ফেসবুকে বন্ধু খুঁজতে, গুগলে কোনো কিছু জানতে কিংবা আমাজনে কেনাকাটা করতে গেলে প্রায়ই সেটি আমাদের বন্ধু, ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ, বিষয় কিংবা কোনো নতুন বই বা পণ্য দেখা বা কেনার জন্য ‘সুপারিশ’ করে। লাখ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য, পারস্পরিক সম্পর্ক এবং কেনাকাটার ধরন দেখে ব্যবহারকারীর জন্য সেরা কিছু সুপারিশ করার এই ‘বুদ্ধি’ তারা পায় কোথায়?

কম্পিউটারবিজ্ঞানীরা বলেন, এটা হচ্ছে ঠিক তথ্য খুঁজে পেয়ে ঠিক বিষয়টা সুপারিশ করতে পারার ব্যবস্থা। আর বদরুল বললেন, ‘আমাদের কাজটি এর আগের ব্যবহৃত অ্যালগরিদমের চেয়ে অনেক উন্নত।’

লেখক: মুনির হাসান



মন্তব্য চালু নেই