গুলশানে নিহত ২ সন্ত্রাসীর বাড়ি বগুড়ায়

ঢাকার গুলশানের রেস্তোঁরা হলি আর্টিজান বেকারিতে হত্যাযজ্ঞে অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীদের একজনের নাম খায়রুল ইসলাম বাঁধন। তার বাড়ি বগুড়ায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে নিহত আরেক সন্ত্রাসী ‘বিকাশ’ এর বাড়ি বগুড়ার ধুনটে শনাক্তকরণের কাজও চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত খায়রুল ইসলাম বাঁধনের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চোপনিগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামে। সে দিনমজুর আবু হোসেনের ছেলে। বাবা-মার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বাঁধনই বড়। সোমবার বিকেলে খায়রুলের বাবা আবু হোসেন ও মা পেয়ারা বেগমকে লাশ শনাক্ত করার জন্য আটক করেছে পুলিশ। গণমাধ্যমে ছবি দেখে বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা খায়রুলকে চিনতে পারেন।

বাঁধনের বাবা আবু হোসেন জানান, খায়রুল ইসলাম বৃ-কুষ্টিয়া দারুল হাদিস সালাদিয়া কাওমি মাদ্রাসায় পড়াশুনা শুরু করেন। পরে বিহিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এক বছর ধরে খায়রুল বাড়ি থেকে নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় সাংবাদিকদের নিকট হারানো বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য আট-নয় মাস আগে গিয়েছিলেন। কিন্তু থানায় জিডি করতে হবে বলে আর বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি ।

উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান আলী জানান, প্রথমে গণমাধ্যমে ছবি দেখেই গ্রামে জানাজানি হয়। পরে রবিবার বিকেলে পুলিশ একটি ছবি নিয়ে বাড়িতে আসে। প্রথমে তার বাবা-মা ছবিটি চিনতে পারছেন না বলে জানান। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা খায়রুলের ছবি দেখতে চাইলে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। পরে পুলিশ খায়রুলের মা-বাবাকে আটক করেছে।

ডিবি পুলিশের ওসি আমিরুল ইসলাম সোমবার বিকেলে বলেন, জঙ্গী খায়রুলকে সনাক্ত করার জন্য তার বাবা-মাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে নিহত জঙ্গি ‘বিকাশ’ (পুলিশ এ নামে শনাক্ত করে) এর প্রকৃত নাম শফিকুল ইসলাম উজ্জল। সে জেলার ধুনট উপজেলায় কৈয়াগাড়ী গ্রামের মো. বদিউজ্জামানের ছোট ছেলে।

বদিউজ্জামান জানান, উজ্জ্বল এইচএসসি পাসের পর বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হয়। পরে সেখানে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ঢাকার আশুলিয়া থানার শাজাহান মার্কেট এলাকায় মাদারী মাতব্বর কেজি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেয়। দু’বছর ধরে সে সেখানে শিক্ষকতা করছিল। ৬ মাস আগে উজ্জ্বল একবার বাড়িতে আসে। সবাইকে বলে, আমি বেশ কিছুদিনের জন্য চিল্লায় (তাবলীগের দাওয়াতি কার্যক্রম) যাচ্ছি। তার পর সে আর ফিরে আসেনি।

ঢাকায় গুলিতে মারা যাওয়া৬ জনের ছবির মধ্যে একজন তার ছেলে উজ্জ্বল বলে শনাক্ত করেনবদিউজ্জামান।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, নিহত বিকাশ নামে পরিচয় পাওয়া যুবকের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। বদিউজ্জামানের ছেলেকে কিছুটা শনাক্ত করা গেছে। কিন্ত শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হত্যাযজ্ঞ চালায় সন্ত্রাসীরা। পর দিন শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সেনা নেতৃত্বাধীন সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সংকটের রক্তাক্ত অবসান ঘটে।

অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়, যাদের জঙ্গিরা আগেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছিল। ওই ২০ জনের ১৭ জন বিদেশি নাগরিক ও ৩ জন বাংলাদেশি ছিলেন। উদ্ধার অভিযানে ৬ সন্ত্রাসী নিহত হয়। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম দফা উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ।

গুলশানে কমান্ডো অভিযানে নিহত হওয়া বিকাশ ও বাঁধনের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, বিকাশ সম্পর্কে কিছু জানি না। বাঁধনের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। রবিবার বিকেলে বগুড়ার পুলিশ তার বাবা আবুল হোসেন, মা পিয়ারা বেগম ও ভগ্নিপতি নিহত বাধনের পরিচয় সনাক্ত করার জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সোমবার তারা খায়রুল ইসলাম বাঁধনের ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করতে পেরেছে।



মন্তব্য চালু নেই