গুলশান হামলা: অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গিরা

গুলশান হামলায় অত্যাধুনিক অস্ত্র, বোমা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গিরা। বিদেশিদের হত্যায় তারা ব্যবহার করেছে দেশীয় ধারালো অস্ত্র। কুপিয়ে ও গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিদেশিদের। জিম্মি পর্ব থেকে শুরু করে হত্যার পর বিদেশিদের রক্তাক্ত লাশের ছবিও ইন্টারনেটে আপলোড দেয় তারা। দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এ হামলায় জঙ্গিদের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে হতবাক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’শেষে দুপুর ১টায় সেনাসদর অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্স পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী এ তথ্য জানান।

এর আগে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের রেস্টুরেন্ট ‘হলি আর্টিজান বেকারি’তে শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় জঙ্গিরা প্রথম হামলা চালায়। গুলি করতে করতে ভেতরে ঢুকে রেস্টুরেন্টে থাকা লোকদের জিম্মি করে ফেলে। খবর পেয়ে গুলশান থানাসহ আশেপাশের থানাগুলো থেকে পুলিশ ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। গিয়েই তারা রেস্টুরেন্ট কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ে। পুলিশ বুঝতেই পারেনি জঙ্গিরা অত্যাধুনিক অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিল। যে কারণে জঙ্গিদের পাল্টা আক্রমণে পুলিশ সদস্যদের অনেকেই হতাহত হন। পিছু হটতে বাধ্য হন পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’-এর সময় ঘটনাস্থল থেকে জঙ্গিদের ব্যবহৃত বেশ কিছু অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে চারটি পিস্তল, একটি ফোল্ডেড বাট একে ২২, ৪টি অবিস্ফোরিত আইইডি, একটি ওয়াকিটকি সেট ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে সেনা সদর।

সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্স পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী আরও বলেন, যে ২০ বিদেশি নাগরিকের লাশ তারা উদ্ধার করেছেন তাদের হত্যা করা হয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযান শুরুর আগে। রাতেই তাদের হত্যা করা হয় বলে ধারণা তাদের। অভিযানের সময় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি নাগরিক। এর মধ্যে দুজন শ্রীলঙ্কার ও একজন জাপানের নাগরিক। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’-এর ১৩ মিনিটের অভিযানে জঙ্গিদের ছয়জন ঘটনাস্থলে মারা যায়। সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার রাতে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা, জিম্মি ও হামলাকারী মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ২৮ বলে জানান তারা।

অপারেশনে অংশ নেওয়া র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, জঙ্গিদের হত্যাকাণ্ডের ধরন নৃশংস ও লোমহর্ষক। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিদেশিদের হত্যা করা হয়। এছাড়া জঙ্গিদের কেউ জিম্মিদের হত্যা করেছে। কেউ সেই তথ্য ইন্টারনেটে তাদের লিংকগুলোতে ছবিসহ আপলোড করেছে। আবার কেউ বাইরে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

জঙ্গিদের হামলার পরপরই রেস্টুরেন্ট থেকে পালিয়ে বের হতে সক্ষম হন ‘ও কিচেন’-এর কর্মচারী সুমন রেজা। তিনি বলেন, আমরা ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ গুলির আওয়াজ পেয়ে দেখি, পিৎজা বানানোর কিচেনের সামনে দু’জন লোক ‘আল্লাহু আকবর’স্লোগান দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। প্রথমে ফাঁকা গুলি করলো। গেস্টরা সব শুয়ে পড়লো যে যার মতো। এরপর হামলাকারীরা বেশ ক’টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। আমরা কয়েকজন ছাদে চলে যাই। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিরাপদস্থানে যাই।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলেই পুলিশের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ সময় বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার রবিউল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জঙ্গি নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি জঙ্গিরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করছেন বলে তথ্য পেয়েছেন তারা। গত এপ্রিলে বগুড়া থেকে জঙ্গিদের কাছ থেকে গ্রেনেড, পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এর আগে আরেকটি অভিযানে একই এলাকা থেকে এসএমজি, এ কে ২২ সাব মেশিনগান, জার্মানির তৈরি এসএমজি, পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিনসহ ৮০টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছিল একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে।

গত জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের শহীদ হামজা ব্রিগেড নামের জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে আটটি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করা হয়। এরআগে গত বছর চট্টগ্রাম এলাকা থেকেই একে-৪৭, ৯টি একে-২২, ৪৪টি বিদেশি রিভলবারসহ অন্যান্য অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। গুলশানের হামলায়ও এ.কে ২২ ব্যবহার করে জঙ্গিরা।



মন্তব্য চালু নেই