গুলশান হামলা: মারজানকে ধরতে ব্লক রেইড

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে নৃশংস জঙ্গি হামলার অপারেশনাল কমান্ডার মারজানও ঢাকায় আত্মগোপন করে আছেন। মারজানসহ গুলশান হামলার অন্য দু’জন মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক ও তামিম ইকবালকে ধরতে রাজধানীর বিভিন্ন এলকায় ব্লক রেইড চালানো হচ্ছে।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।

গুলশান হামলার অন্য দু’জন মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক এবং বাংলাদেশ ও কানাডার যৌথ নাগরিক তামিম ইকবালও রাজধানীতে লুকিয়ে আছেন বলে এর আগে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, মারজানের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন এই জঙ্গিনেতা এখন ‘গোয়েন্দা জালে’। মারজানের তথ্য চেয়ে শুক্রবার পুলিশের বিশেষ অ্যাপ ‘হ্যালো সিটি’তে তার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। মারজানের বিস্তারিত পরিচয় জানা না গেলেও তার সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে মনে হয়েছে, মারজান ঢাকায় বা দেশের অন্য বড় কোনো শহরে বেড়ে উঠেছে। তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডও উচ্চবিত্ত এবং উচ্চশিক্ষিত বলেই মনে হচ্ছে। এ কারণে ছবি প্রকাশ করে তার সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এছাড়াও হামলার মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া ও বাংলাদেশ-কানাডার নাগরিক তামিম ইকবাল গোয়েন্দা জালে আছেন। তারা সবাই রাজধানীতে আত্মগোপন করে আছেন বলেই গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা।

মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গুলশান হামলার ঘটনার রাতে মারজানের অবস্থান রাজধানীর কল্যাণপুরে ছিল বলেও নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ায় সেই জাহাজ বাড়ি নামে পরিচিত তাজ মঞ্জিলেই সে ছিল কিনা তা জানা যায়নি।

জানা গেছে, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন সময় রাজধানীর একাধিক এলাকায় এ রকম অন্তত শ’খানেক ব্লক রেইড চালিয়েছে পুলিশ। অপরাধী আটক করতে একটি এলাকাকে বিশেষভাবে রেকি (পর্যবেক্ষণ) শেষে ঘেরাও করে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানোকে পুলিশের ভাষায় ব্লক রেইড বলা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তারা ধারণা করছেন ২২-২৩ বছর বয়সী মারজান (যা তার সাংগঠনিক নাম) তথ্য প্রযুক্তিতেও পারদর্শী। তিনি মূলত: গুলশান হামলার রাতে জঙ্গিদের সাথে সারাক্ষণ যোগাযোগ রক্ষা করেছেন এবং তাৎক্ষণিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

গোয়েন্দারা আশা করছেন, মারজান বা মাস্টারমাইন্ডদের মধ্যে যে কাউকে গ্রেফতার করা গেলে গুলশান হামলা ও নিউ জেএমবির গোপন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে গ্রেফতার করা এক জঙ্গির মোবাইল ফোন যাচাইকালে মারজানের ছবি পাওয়া যায়। পরে বিভিন্ন সময় আটক হয়ে কারাগারে থাকা ও বিচারাধীন অনেক জঙ্গিকে ছবিটি দেখালে তারা ছবির ব্যক্তিটির নাম মারজান বলেই জানায়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই নাম তার প্রকৃত নাম নাও হতে পারে। সাংগঠনিক নাম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে অন্তত ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় জঙ্গি ও পুলিশের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাহউদ্দিন নিহত হন।

পরদিন ২ জুলাই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’নামে বিমান, নৌবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের সমন্বিত অভিযান চালানো হয়। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া কমান্ডো অভিযানে ১২/১৩ মিনিটের মধ্যে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে টার্গেট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সময় ৫ জঙ্গি নিহত হয়। এ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

ঘটনার পর তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) গুলশান হামলার দায় স্বীকার করে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিতর্কিত সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।



মন্তব্য চালু নেই