গোয়েন্দাদের দৃষ্টি এবার ‘মেজর’ জিয়া ও মুসার ওপর!

একে একে নেতৃস্থানীয় জঙ্গিদের গ্রেফতার ও বিভিন্ন অভিযানে নিহতের পর সফলতার একেকটি ধাপ পেরুচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নবগঠিত শাখা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিইউ)।

গত ৬ মাসে বেশ কয়েকটি বড় ও সফল জঙ্গি অভিযান সম্পন্ন করেছে সিটিইউ। এসব অভিযানে মাথা-মাথা সব জঙ্গির পতন হয়েছেন। এ কয়দিনে কমপক্ষে ৪০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে।

মাস্টারমাইন্ড প্রায় সবাই পুলিশি অভিযানে বা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। এর মধ্যে গুলশান হামলার পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানে তানভীর কাদেরী, তামিম ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদসহ ৪০ জঙ্গি নিহত হয়।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) রাতে মোহম্মদপুরের রায়েরবাজার বেড়িবাঁধে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে অপর মাস্টারমাইন্ড মারজান ও তার সহযোগী উত্তরবঙ্গের অন্যতম জঙ্গি নেতা সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল।

তবে বাকি রয়ে গেছে নব্য জেএমবির বর্তমান প্রধান সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া ও অন্যতম নেতা মুসা। পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ দুজনকে খুঁজছে বহুদিন ধরে। পুলিশের টপমোস্ট ওয়ানটেড লিস্টের প্রথম দিকেই রয়েছে এ দুই জঙ্গির নাম।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনাকারীদের মূল হোতা এই মেজর জিয়া। জিয়ার পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তার বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিল্লুল হক। তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে। গত ৫ বছর ধরে সে পলাতক।

পালিয়ে থেকেই দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিস্তারে অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করছে তিনি। রাজধানীসহ বিভিন্ন সময় টার্গেট কিলিংয়ে জড়িত গ্রেফতার কয়েক জঙ্গির দেয়া তথ্যে প্রথম উঠে আসে মেজর জিয়ার নাম। এসব জঙ্গির মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড, ই-মেইল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করেও অনেক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একাংশ নব্য জেএমবির সঙ্গেও মেজর জিয়ার যোগাযোগ রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে মেজর জিয়া পুলিশের নজরদারির মধ্যেই আছে।

২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনা সদর দফতরের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীর সাবেক ও তৎকালীন কিছু সদস্য দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে মেজর জিয়া অন্যতম বলে জানা যায়। মেজর জিয়া জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে সেনা সদর দফতর জানিয়েছিল। এ অভ্যুত্থান চেষ্টার পেছনে ইশরাক আহমেদ নামে তার এক প্রবাসী বন্ধু জড়িত ছিল।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) আধ্যাত্মিক নেতা জসীমুদ্দিন রাহমানীকে গ্রেফতারের পর সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া এবিটির শীর্ষ সংগঠকের দায়িত্বে আসেন বলে গোয়েন্দারা জানতে পারেন। ব্লগার, মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশকসহ অন্তত ৯ জনকে টার্গেট কিলিংয়ের নেপথ্যে মূল হোতা ছিলেন মেজর জিয়া। এছাড়া আরো কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টা পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। তার সঙ্গে আশপাশের দেশের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন।

দেশকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গুপ্তহত্যাসহ নানা পরিকল্পনার নেপথ্যের নায়ক তিনি। তার নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে গত ৩ বছরে এবিটির অন্তত আটটি স্লিপার সেল তৈরি হয়েছে। এসব স্লিপার সেলের সদস্য রয়েছে ৪ থেকে ৫ জন। অর্থাৎ প্রায় ৩০ জন দুর্ধর্ষ গুপ্তঘাতক তৈরি করেছেন জিয়া। আর এসব ঘুপ্তঘাতকই ব্লগার, মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশকদের হত্যা চেষ্টা এবং হত্যা করেছে।

পুলিশ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, টার্গেট কিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত একটি গ্রুপ হচ্ছে এবিটি। তদন্তে উঠে এসেছে এই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, ৯টি টার্গেট কিলিংয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত জিয়া। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পাঁচজন ব্লগার, একজন প্রকাশক ও সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা দু’জনকে হত্যা করেছে এবিটি।

ওই সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হত্যার পেছনেও এবিটি জড়িত। এসব ঘটনার তদন্ত শেষে মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে নাম উঠে আসে জিয়ার।



মন্তব্য চালু নেই