গ্রামীন নারীরা কৃষি খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় অর্থনীতিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখছে

খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে রবি শস্য, গবাদি পশু, হাঁস মুরগি, সবজি চাষ, মৎস্য চাষ, বনায়ন ইত্যাদি কাজে গ্রামীন নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রেখে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুর্ত্ব পুর্ন ভুমিকা পালন করছে। যদি সরকারী খাসজমি ও ভুমিতে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা যায় তাহলে তারা আরো বেশী অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। কিন্তু ১৯৮৭ সালে প্রনীত ও ১৯৯৭ সালে সংশোধিত খাস জমি বিতরন নীতি মালায় নারীকে খাস জমি বিতরনে ভুমিহীন নারীকে বিধবা হতে হবে, স্বামী পরিত্যক্তা ও সক্ষমপুত্র সন্তান থাকতে হবে ইত্যাদি শর্তযুক্ত থাকায় খাসজমি প্রাপ্তিতে নারীর অধিকার খর্ব করা হয়েছে এবং জেলা, উপজেলা খাস জমি বিতরন কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব না থাকায় নারীর পক্ষে প্রতিনিধিত্ব সরার সুযোগ না থাকায় নারীরা সরকারী খাসজমি বরাদ্দ পাচ্ছে না।

অন্যদিকে চিহ্নিত ভুমিদস্যুরা নামে বেনামে সরকারী খাসজমি হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রক্ষাকারী নারীরা ভুমিতে পুরোপুরি অধিকার বঞ্চিত। পরিসংখ্যানে দেখা যায় কৃষি জমিতে পুরুষের মালিকানা ৯৬%, নারী মাত্র ৪% আর কৃষিতে নারী-পুরুষের শ্রমশক্তির অংশীদারিত্ব পুরুষ ৭% (১.১লক্ষ) এবং ১০৩%(৭.৭ লক্ষ)। তাই অবিলম্বে ১৯৯৭ সালে প্রণীত খাসজমি বন্দোবস্ত ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা পরিবর্তন করে স্বামী/পুত্রের মালিকানার পরিবর্তে নারীর মালিকানা প্রতিষ্ঠা, জেলা, উপজেলা খাস জমি বন্দোবস্ত কমিটিতে কৃষক প্রতিনিধি হিসাবে নারীর সমপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবী করা হয়। একই সাথে নারী নিজ নামে সরাসরি আবেদন করার, চিরকুমারী, নিঃসন্তান ভুমিহীনদের আবেদন করার বিধান প্রবর্তনের দাবী জানানো হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ইং নগরীর সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে খাসজমিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে জেলা খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত দাবী জানানো হয়।

চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক ও জেলা খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভাপতি মেজবাহ উদ্দীনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ও জেলা খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমিন, কমিটির সদস্য জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহাবুদ্দিন, কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বিলকিছ হক, বন বিভাগের প্রতিনিধি কাজল তালুকদার। ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইএসডিই বাংলাদেশ নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন, প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রশিকার বিভাগীয় সমন্বয়কারী অজয় মিত্র শংকু, অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট রেহেনা আকতার বেগম ও ইলমার প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু। আলোচনায় অংশনেন চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, ফারহানা জাবেদ, জেসমিন পারভীন জেসি, ফারজানা পারভীন, সীতাকুন্ড উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুন্নাহার চৌধুরী নেলী, বোয়ালখালীর শাহিদা আকতার শেফু, রাউজানের ফৌজিয়া আকতার, হাটহাজারীর মনোয়ারা বেগম, সাতকানিয়ার দুরদানা ইয়াসমিন, চন্দনাইশ উপজেলা সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আকতার চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সভানেত্রী সৈয়দা নিশাত আকতার নিশু, বাঁশখালীর সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াম্মুন্নাহার, চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ নজরুল ইসলাম, মহিলা পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক সুগাতা বড়–য়া, চকরিয়া উপজেলা ইউপি মহিলা মেম্বার সমিতির সভানেত্রী ও নারী কৃষক রোকেয়া বেগম বেবী, ক্যাব পাহড়তলীর হারুন গফুর ভুঈয়া, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলার আহবায়ক আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব কোতোয়ালীর সভানেত্রী জন্নাতুল ফেরদৌস, নারী নেত্রী সায়মা হক, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক জানে আলম ও এএম তেহিদুল ইসলাম, পিসিডিএস এর শম্পা চৌধুরী, চট্টগ্রাম গণউন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির নেতা ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ ইব্রাহিম, লেডিস ক্লাবের লায়লা ইব্রাহিম বানু, নারী নেত্রী নুরী মাহফুজা, সিএসডিএফ’র শম্পা কে নাহার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ককসবাজেরর কৃষকলীগ নেতা আলাউদ্দীন আজাদ, চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌস আরা তাহের প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দীন তাঁর বক্তব্যে বলেন বর্তমান সরকার একটি নারী বান্ধব সরকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারীদের কল্যনে অনেকগুলো যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যা সারা বিশ্বে প্রশংসনীয় হয়েছে। বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা, নারী কৃষি কার্ড প্রবর্তন, সন্তানের পরিচয়ে মায়ের অভিভাবকত্ব নিশ্চিত করা, সরকারী চাকুরীতে নারীর সম অংশগ্রহন নিশ্চিত করা, বিভিন্ন কমিটিতে নারীর অংশগ্রহন বাড়ানোসহ অনেকগুলি যুগান্তকারী দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন। তবে খাস জমিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে বাঁধাগুলি সরকারের যথাযথ মহলে দৃষ্ঠি আকর্ষনের জন্য তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বলেন খাসজমি বন্টন নীতিমালা অনেক পুরানো যার কারনে এখানে নারীদের অংশগ্রহন নিশ্চিত সম্ভব হয়নি। তিনি অভিমত প্রকাশ করে বলেন সরকারের সকল কমিটিতে নারীর অংশগ্রহন নিশ্চিত করার জন্য সরকারের যথাযথ নির্দেশনা থাকে। জেলা, উপজেলা খাসজমি বিতরন কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত এবং প্রকৃত ভুমিহীন কৃষকরা যেন খাসজমি পায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার আশ্বাস দেন। তিনি খাসজমি বিতরনে স্থানীয় জোতদারদের প্রভাব খর্ব করে প্রকৃত ভুমিহীনদের খাসজমি বিতরনে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। স্থানীয় ভুমি অফিসে তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান কোন ভুমি অফিস তথ্য না দিলে জেলা প্রশাসককে লিখিত ভাবে জানানোর আহবান জানান।

RDC Ruhul Amin

অন্যান্য বক্তারা অভিযোগ করে বলেন প্রকৃত ভুমিহীনরা খাস জমি পাচ্ছে না। সেখানে নারীতো আরো বেশী অসহায়। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু দালাল শ্রেনী সরকারী খাসজমি গুলি নামে বেনামে বন্দোবস্ত নিয়ে নিচ্ছে। বর্তমান সরকার প্রধান তৃনমুলের নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে অনেক কিছু করতে কঠোর পরিশ্রশ করলেও একশ্রেনীর অসাধু সরকারী কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতাদের কারনে সরকারের সদিচ্ছা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বক্তারা নারীদের একক ভাবে সরকারী খাসজমি না পেলেও সমিতিবদ্ধ হয়ে সরকারী খাসজমিতে আবেদনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তবে প্রশাসনের উচিত নিষকন্ঠক খাসজমি যেন তারা পায় এবং কি পরিমান খাস জমি আছে তা তালিকা সর্বসাধানের গেছরীভুত করা। একই সাথে খাস জমি ছাড়াও পাহাড়, টিলা গুলিও ফলজ. বনজ, ডেইরী ও পোল্ট্রি চাষের জন্য বন্দোবস্তী দেয়ার দাবী জানান।

বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলা, উপজেলা পর্যায়ে অনেকগুলি কমিটি পুনঃগঠন করেছেন যেখানে নারী প্রতিনিধিত্বের কথা পরিস্কার করে বলা আছে। কিন্তু খাস জমি বন্টন কমিটি পুনর্ঃগঠন হয়নি এবং এটার গঠন প্রক্রিয়া এখনো অনেক পুরানো ও অসংগতিপুর্ন, যা দ্রুত পরির্বতন দরকার। খাসজমি বন্টন কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব না থাকায় নারীর পক্ষে কথা বলার কেউ থাকছে না। যা খুবই দুঃখজনক।

উল্লেখ্য আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম এর সহযোগিতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আইএসডিই বাংলাদেশ এর উদ্যোগে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় বিধানে নারীর অবদানকে রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ে নারীর কৃষি উৎপাদনে সমমালিকানা প্রতিষ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে “নারী কৃষকদের স্বীকৃতি ও অধিকার সংরক্ষনে জাতীয় প্রচারাভিযান” পরিচালনা করছে। কর্মসুচির আওতায় বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসুচির আওতায় জেলা খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সাথে মতবিনিময় এর আয়োজন করা হয়। সভায় সরকারী কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী, নারী নেত্রী, নারী কৃষকসহ নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধিসহ ৬৩জন অংশনেন।



মন্তব্য চালু নেই