গ্রাহক হয়রানিতে শীর্ষ দশ ব্যাংক

আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রায়ই ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রাহকদের এসব অভিযোগের শীর্ষে থাকা ১০ ব্যাংকের মধ্যে ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ৪টি বেসরকারি ব্যাংক, একটি বিশেষায়িত ব্যাংক এবং একটি বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। আলোচ্য সময়ে বিল সংক্রান্ত অভিযোগ সবচেয়ে বেশি এসেছে। গ্রাহক অভিযোগ ও নিষ্পত্তি সংক্রান্ত রিপোর্টটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ প্রকাশ করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রাহকদের অভিযোগের শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সোনালী ব্যাংকের নাম। এ সময়ে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৫৬টি অভিযোগ এসেছে। তার পরের অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। এ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মোট ১৭৫টি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা রূপালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ১৪৯টি। একইভাবে, অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৪০টি, ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১২৩টি, জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১০৬টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৮২টি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৭৯টি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৭০টি এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৫৯টি অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জমা হওয়া তিন হাজার ৯৩১টি অভিযোগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে স্বীকৃত বিলের মূল্য পরিশোধ না করা সংক্রান্ত অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৩১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত, যা মোট অভিযোগের ২১ শতাংশ।

এছাড়া প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর মধ্যে ঋণ ও অগ্রিম ১৮ শতাংশ, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত ৬ শতাংশ, ব্যাংক গ্যারান্টি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, মোবাইল ব্যাংকিং ১ দশমিক ৫ শতাংশ, রেমিট্যান্স ১ শতাংশ এবং বিবিধ ১৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারই প্রথম আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অভিযোগের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। আলোচ্য সময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৯৩১টি অভিযোগ এসেছে। যা এর আগের বছরে অর্থবছরের তুলনায় ৫৪৫টি বা ১২ দশমিক ২০ শতাংশ কম।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে অভিযোগ এসেছিল ৪ হাজার ৪৭৬টি। অভিযোগের পরিমাণ কমলেও এবারই প্রথম শতভাগ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩১টি অভিযোগ। নিষ্পত্তির এই হার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৯১টি বা ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রতিটি ব্যাংকেই আলাদা আলাদা গ্রাহক অভিযোগ কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং ছোটখাটো অভিযোগগুলো সেখানেই নিষ্পত্তি করার কথা বলা হয়েছিল। যদি কোনো গ্রাহক সুনির্দিষ্ট ব্যাংকে তার অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে না পারেন তখন পুনরায় বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করতে পারবেন বলেও নির্দেশনা ছিল।

আর এসব কারণেই বিদায়ী অর্থবছরে অভিযোগের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎপরতায় শতভাগ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

গ্রাহক অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ব্যাংকের প্রকৃত মালিক হলেন গ্রাহকরা। সুতরাং তাদের অভিযোগ ব্যাংকগুলোকে শুনতে হবে। তাদের দিকে নজর দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে হবে। স্বচ্ছ, নিবিড় ও মানবিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তিনি ব্যাংকারদের আহ্বান জানান।

অভিযোগের শীর্ষে থাকা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, আগের চেয়ে সোনালী ব্যাংকের সেবার মান অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো গ্রাহকদের উন্নত সেবা দেয়া। তাই সেবার মান আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছি। বর্তমানে অনেক সেবা দিলেও তা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। তার কতগুলো কারণও আছে। সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়। এ ব্যাংকের শাখাও অনেক বেশি। তাই এ ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগও বেশি। তবে আমরা শিগগিরই তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের ১ এপ্রিল গঠন করে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র। পরে এর পরিধি বাড়তে থাকায় আরো বৃহৎ পরিসরে একে ঢেলে সাজিয়ে গঠন করা হয় ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ (এফআইসিএসডি)।মানবকণ্ঠ



মন্তব্য চালু নেই