গ্রেফতার এড়াতে স্বজনদের নিয়ে ভারতে পালালেন রাগিব আলী!

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর সিলেটের শিল্পপতি ও কথিত দানবীর রাগীব আলী পরিবারের চার সদস্যসহ ৬ জনকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির দুটি মামলায় বুধবার রাগীব আলী, তার ছেলে, মেয়ে, জামাতাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন সিলেটের একটি আদালত।

এরপরই গ্রেফতার এড়াতে বুধবার রাগীব আলী তার ছেলে আবদুল হাই, আবদুল হাইয়ের স্ত্রী ও ছেলে এবং তার (রাগীব আলী) বাংলোর দুই শিশুসহ ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

সূত্রটি জানায়, বুধবার বিকেলে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে রাগীব আলীসহ ওই পাঁচজন ভারতে যান। বুধবার বিকেল তিনটার দিকে একটি নোয়া গাড়িতে করে রাগীব আলী, তার ছেলে আবদুল হাই, আবদুল হাইয়ের স্ত্রী ও ছেলে এবং রাগীব আলীর বাংলোর দুই শিশুকে সাথে নিয়ে জকিগঞ্জ যান। জকিগঞ্জে রাগীব আলীর এক ঘনিষ্ট ব্যক্তি ৬টি পাসপোর্ট নিয়ে জকিগঞ্জ সীমান্তের কাস্টমসস্থ ইমিগ্রেশন অফিসে আসেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রাগীব আলীসহ অন্যরা নৌকা দিয়ে কুশিয়ারা নদী পার হয়ে ভারতে পাড়ি জমান। রাগীব আলী ওই নৌকার মাঝিকে ভাড়া বাবদ ৭০০ টাকা দেন বলে সূত্রটি জানায়।

এদিকে রাগীব আলীর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন জকিগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাগীব আলীর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানার কথা নয়। এ বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।’

জকিগঞ্জের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া যায়নি।

জকিগঞ্জ পৌর যুবলীগের সভাপতি আবদুস সালাম জানান, বুধবার বিকেলে নোয়া মাইক্রোবাসযোগে কয়েকজন সঙ্গীসহ রাগীব আলীকে জকিগঞ্জ কাস্টমসের দিকে যেতে দেখেছেন তিনি।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির দুটি মামলায় বুধবার রাগীব আলীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অন্যরা হলেন- রাগীব আলীর একমাত্র ছেলে আবদুল হাই, মেয়ে রোজিনা কাদির, জামাতা আবদুল কাদির, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ ও তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত। তাদের সবাইকে খুঁজছে পুলিশ। এর আগে রাগীব আলী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দাখিল করা দুটি চার্জশিট বুধবার আমলে নেন আদালত। এ সময় মামলাটির পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৩ আগস্ট।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা তারাপুর চা বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে রাগীব আলী তার আত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদকে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তারাপুর চা বাগানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ৬ মাসের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন ১৫ মে চা বাগানের কিছু স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু প্রায় ৮০০ হোল্ডিং নিয়ে স্থাপিত অবৈধ আবাসন প্রকল্প এবং শিক্ষা ও চিকিৎসার নামে স্থাপিত রাগীব আলীর বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই