গড়ে তুলুন হাসিখুশী, প্রাণবন্ত শিশু

একটি শিশু যখন পৃথিবীতে আসে তখন তার মত নিষ্পাপ আর পবিত্র আর কিছু কি হয়? হয় না। কিন্তু সবার আকাঙ্ক্ষিত এই শিশুটিকে পুরোপুরি ইতিবাচক পরিবেশ দেওয়ার দায়িত্ব কি আমরা পালন করি? একটু ভেবে দেখুন, শিশুর জন্মের পরই কিন্তু আমরা আলোচনা শুরু করি তার গায়ের রঙ কেমন, চুল ঘন হবে নাকি হবে পাতলা, চোখ বড় হবে নাকি হবে ছোট!

আমাদের কাছে শিশুর সৌন্দর্য্যের একটা প্রমাণ মাপকাঠি রয়েছে। শিশুর আচার-আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ তারও একটা হিসেব আছে। কিন্তু কেন? নাটক-সিনেমায় অথবা প্রতিবেশীর সন্তানের মাঝে দেখা বৈশিষ্ট্য কেন আমরা খুঁজি আমাদের সন্তানের মাঝেও? প্রতিটি শিশুই আসলে আলাদা। কারণ তাদের বাবা-মা আলাদা, পরিবেশ আলাদা। তাই জৈবিক এবং মনস্তাত্ত্বিক ভিন্নতা নিয়ে সে এই পৃথিবীতে এসেছে। এটা আমাদের মেনে নেওয়া উচিৎ এবং সন্তানকেও বেড়ে উঠতে দেওয়া উচিৎ সেভাবেই।

গড়ে তুলুন একজন হাসিখুশী শিশু যে ভালবাসবে নিজেকে। কীভাবে? জেনে নিন-

সবাই দেখতে সুন্দর
শিশুদের নিজের শরীরের প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান ছোটবেলা থেকে নিজের দেহকে ভালবাসতে শিখলে পরবর্তীতে তার শারীরিক গঠন নিয়ে হতাশা কাজ করবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাদের শেখানো উচিৎ আমাদের প্রত্যেকের শরীরের গঠন আলাদা, তাই দেখতে কেমন লাগছে তার চেয়ে সুস্থ এবং ভাল থাকাই হওয়া উচিৎ জীবনের আসল উদ্দেশ্য। গায়ের রঙ, উচ্চতা, চুলের ঘনত্ব এগুলো সবরকমই সুন্দর।

স্বাদের পছন্দ ভিন্ন হতেই পারে
প্রতিটি শিশু আলাদা। একেকজনের বড় হওয়ার গতি হয় ভিন্ন, তেমনই খাবারের প্রতি রুচিও সবার এক রকম হয় না। তাই জোর করে খাওয়ানো কিংবা খাওয়া কমিয়ে দেয়ার বদলে শিশু যেন ছোট থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে শেখে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশু সব ধরনের খাবার খায় কিনা সেটাই জরুরী নয়। তার পছন্দের খাবার তার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করলেই হল। অন্যদের সাথে তুলনা করে নয়, নিজেই নানান কৌশলে খাবার খেতে দিন।

ওজন নয়, চাই সুস্বাস্থ্য
সম্প্রতি একটি মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাবা-মা তাদের কিশোর বয়সী সন্তানদের বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত, তাদের বেশিরভাগই বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করেছেন। ফলে নানা ধরনের ইটিং ডিজঅর্ডার, যেমন – অ্যানারক্সিয়া, মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া ইত্যাদি ঝুঁকিও দেখা দিচ্ছে এই শিশুদের মাঝে। অপরদিকে যেসব কিশোর-কিশোরীদের বাবা-মা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দিকে জোর দিয়েছেন, তাদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা অনেকটাই কম দেখা যায়। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে উৎসাহ দিন।

সখের চর্চায় থাকুক স্বাধীনতা
শিশুর সখের মাঝে কোন ঠিক-ভুলের প্রশ্ন আসতে পারে না। সখের ক্ষেত্রে তা ভবিষ্যতে কেমন কাজে লাগবে, আদৌ কাজে লাগবে কিনা এসব চিন্তাও ভিত্তিহীন। শিশুকে পূর্ণ সাধীনতা দিন তার সখের চর্চা করার। সবসময় ইতিবাচক চোখে দেখুন, প্রশংসা করুন, উৎসাহ দিন। পাশের বাড়ির শিশুটির সখ গান করা হলেই আপনার শিশুরও তেমন কোন সখ থাকতে হবে তা নয়। কাগজের নৌকা বানানোর মত একটা সখ থাকতে পারে তার। আপনি আমি কেউই জানি না শিশুর মস্তিষ্ক এর থেকেই দারুণ কিছু তৈরি করবে কিনা!

সবকিছু সবসময় চাইতে নেই
বাইরের খাবার বা দামী খেলনা সব সময় চাইলেই দেওয়া যাবে না। কিন্তু আপনার নেতিবাচক উত্তর শিশুর মাঝে দুঃখবোধ তৈরি করতে পারে। তাকে এমনভাবে বোঝান যে, কিছু জিনিস সবসময় পেতে নেই। এগুলো উৎসবের জিনিস। হঠাৎ হঠাৎ পাওয়ার জিনিস। শিশুরও মন ভাল থাকলো, আপনাকেও কষ্ট পেতে হল না।



মন্তব্য চালু নেই