‘ঘরে ৩ স্ত্রী রেখেও সুরুজ অন্য নারীদের সাথে..’

‘ও চরিত্রহীন, ঘরে তিন স্ত্রী রেখেও একাধিক নারীর সঙ্গে ..(প্রকাশ অযোগ্য শব্দ)। অনেক বাধা দিয়েছি। আর বাধাই কাল হলো। আমাকে এসিড মেরে ঝলসে দিয়েছে। একেবারে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ সহায়। বেঁচে গেছি।’ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ছোট স্ত্রী সুবর্ণা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সুবর্ণা ভাবতেই পারছেন না স্বামী এমন কাজ করতে পারে। শুধু তাই নয়, সুবর্ণার কন্যাকেও এসিডে ঝলসে দিয়েছে। রাজধানীর রূপনগরের টিনসেডের দোতলা বাড়িতে বসবাস করতেন তিন সতীন। তাদের স্বামীর নাম সুরুজ আলী খান (৫৫) বড় স্ত্রী খাদেজা থাকেন নিচতলায়, মেজো স্ত্রী নিলুফা বেগম দোতলার বামপাশে এবং ছোট স্ত্রী মাহফুজা আক্তার থাকতেন দোতলার মধ্যখানের একটি কক্ষে।

খাদেজা ও নিলুফা বেগম দুই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সুরুজ আলী খান নিজেও মিল্ক ভিটার কর্মচারী ছিলেন। বাড়ির রান্না করতেন ছোট স্ত্রী মাহফুজা আক্তার সুবর্ণা (২৮)।

সুবর্ণা জানান, ঘটনার দিন আমার স্বামী আমার কক্ষে দুই অপরিচিত যুবককে নিয়ে আসে। তারা কারা প্রশ্ন করলে সুরুজ কোনো উত্তর দিতে পারেনি। এ সময় তারা আমাকে এসিড মেরে চেলে যায়। আমার স্বামী তাদের বাধাও দেয়নি। কোনো চিৎকার চেঁচামেচিও করেনি।

তিনি বলেন, ঘরে তিন স্ত্রী রেখেও সে অন্য নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতো। নেশা করতো। আমি এতে বাধা দিতাম। ১২ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। ১ বছর ধরে আমার ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছে সুরুজ। একমাত্র মেয়ের ভব্যিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাকে কিছু বলিনি। আমার স্বামীর অপর দুই স্ত্রী অন্য স্থানে চাকরি করে। আমিও আমার মেয়ের ভব্যিষ্যতের দিকে তাকিয়ে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেই। এতে রাজি ছিল না সুরুজ।

তার স্বামীর ডান হাত কিভাবে পুড়লো প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা যখন এসিড মেরে চলে যায় তখন সুরুজ আমাকে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে। এ সময় আমার শরীরের এসিড তার ডানহাতের বাহুতে লেগে হাতের বাহু পুড়ে গেছে। শুধু তাই নয় আমার মেয়েরও হাত পুড়েছে। ভাড়াটিয়া জয়নালের হাতও পুড়েছে। আমার মেজো সতীন নিলুফারও হাত পুড়েছে। তিনি তার স্বামীর বিচারের দাবি জানান।

গতকাল সকালে সরজমিনে রূপনগর থানাধীন ১৩ রোডের ৪৫০/সি/১ নম্বর টিনশেডের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়িটির সামনে স্থানীয়দের লোকজনের জটলা। টিনশেডের দোতলা বাড়িটির ছাদ তৈরি করা হয়েছে কাঠ দিয়ে। দোতলায় ছোট স্ত্রী মাহফুজা আক্তার সুবর্ণার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, এসিডের কারণে বিছানার বাম পাশ পুড়ে গেছে। দরজায় এসিডের দাগ লেগে আছে।

সুরুজ আলী খানের দ্বিতীয় স্ত্রীর কন্যা সুমাইয়া সুলতানা জানান, সকাল বেলায় ঘুমিয়ে ছিলাম। ওই সময় চিৎকার ও কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পাই। এরপর নিচতলায় গিয়ে দেখি যে, এসিডে ছোট মার মুখ, বুক ও পিট পুড়ে গেছে। পানি ঢালা হচ্ছিল। ওই ঘটনায় তারা বাবা জড়িত কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানেন না বলে জানান।

ভাড়াটিয়া জয়নাল হোসেন জানান, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত বলে আমরা ধারণা করছি। জয়নালের স্ত্রী হালেমা বেগম জানান, শুধু সুরুজ আলীর সঙ্গে সুবর্ণার মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কারণে ঝগড়া হতো। সুবর্ণা তাকে একবার তালাক দেয়ারও উদ্যোগ নিয়েছিল। দুই স্ত্রী চাকরি করার কারণে বাড়িতে কেউ না থাকায় তাকে শুধু রান্না করার পরামর্শ দিতেন। স্বামীর কথা উপেক্ষা করে সুবর্ণা মিরপুর এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। চাকরি করার কারণে ৫ মাস আগে সুরুজ তার ছোট স্ত্রী সুবর্ণাকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেন। এতে তার ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সূত্র জানায়, এডিস নিক্ষেপের ঘটনায় সুবর্ণা বাদী হয়ে রূপনগর থানায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর-৬। মামলায় তিনি নিজ স্বামী সুরুজ আলী খান ও অজ্ঞাত দুইজন যুবককে আসামি করেছেন। ঘটনার পরেই পুলিশ সুরুজ আলী খানকে আটক করেছে।

রূপনগর থানার ওসি শহিদ আলম জানান, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত। এটা সুরুজ আলী খান ঘটিয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। তার স্ত্রী আমাদের কাছে অভিযোগ করে মামলা করেছেন। তিনি আরও জানান, ওই সময় যে দুইজন যুবক এসিড মেরেছে তাদের চিহ্নিত করা গেছে। পুলিশ তাদের ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছে। -এমজমিন



মন্তব্য চালু নেই