ঘেমে যাওয়ায় মুসলিম দম্পতিকে নামিয়ে দিল মার্কিন বিমান

ফয়সালকে দেখে এক বিমান কর্মীর মনে হলো, ফয়সাল ঘামছেন। নাজিয়াকে কানে ইয়ারফোন গুঁজতে দেখে সন্দেহটা আরো বাড়ল। এর পর তাদের মুখে ‘আল্লাহ’ শব্দটাও শোনা গেল যেন!

পাইলট কী আর ঝুঁকি নিতে পারেন! বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্লেন থেকে নামিয়ে দেয়া হলো মুসলিম দম্পতিকে।

ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন মুসলিমদের মধ্যে। ডেল্টা এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানিয়েছে কাউন্সিল অব আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর)।

পাক বংশোদ্ভুত মার্কিন ফয়সাল আলি এবং তার স্ত্রী নাজিয়া আমেরিকার সিনসিনাটিতে থাকেন। দশম বিবাহ বার্ষিকীতে ফয়জল চমকে দেয়ার মতো উপহার দিয়েছিলেন স্ত্রী নাজিয়াকে— প্যারিস বেড়াতে যাওয়ার টিকিট। কয়েকটা অসামান্য দিন প্যারিসে কাটিয়ে ডেল্টা এয়ারলাইন্সের প্লেনে চড়ে বসেছিলেন নাজিয়া-ফয়সাল। কিন্তু আর সুখকর রইল না দশম বিবাহ বার্ষিকীটা। ফয়সাল-নাজিয়া প্লেনে ওঠার পর থেকেই সম্ভবত তাদের উপর নজর রাখছিলেন বিমানের এক কর্মী। যাত্রী তালিকায় মুসলিম নাম দেখেই বোধ হয় অতি মাত্রায় ‘সতর্ক’ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। টেক-অফের সময় এগিয়ে আসছিল। ফয়সাল-নাজিয়াও নিজেদের একটু গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। টানা ন’ঘণ্টার ফ্লাইট। নাজিয়া স্নিকার্সটা পা থেকে খুলে রাখলেন। একটা এসএমএস পাঠালেন বাবা-মাকে। তার পর কানে গুঁজে নিলেন মোবাইলের ইয়ারফোন। যাত্রা শুরুর আগে হয়তো দু’জনেই ‘আল্লাহ’কে স্মরণও করে নিলেন একবার। একটু দূরে দাঁড়িয়ে বিমানের যে কর্মী আড় চোখে নজর রাখছিলেন পাক-মার্কিন মুসলিম দম্পতির উপর, তার কাছে কিন্তু এই টুকরো টুকরো ছবিগুলো আতঙ্কের হয়ে উঠল। টেক-অফের ঠিক আগে মুসলিম মহিলা এসএমএস করলেন কেন? কাকে, কী জানাতে চাইলেন? কানে ইয়ারফোনই বা গুঁজলেন কেন? বাইরে থেকে কোনো নির্দেশ আসবে নাকি? ফয়সালকে দেখে বিমানকর্মীর মনে হলো, ফয়সাল ঘামছেন। নার্ভাস নাকি? কীসের কথা ভেবে টেনশন হচ্ছে ফয়সালের? এ সব ভাবতে ভাবতেই মুসলিম দম্পতির সিটের দিকে একটু এগিয়ে গেলেন বিমান কর্মী। এ বার শুনতে পেলেন ‘আল্লাহ’ বলছে ফয়সাল-নাজিয়া। বিমানকর্মী নিশ্চিত হয়ে গেলেন, বড়সড় নাশকতার ছক হয়েছে। প্লেন আকাশে উড়লেই খারাপ কিছু ঘটবে।

একটুও সময় নষ্ট না করে পাইলটের কাছে ছুটে যান ওই বিমান কর্মী। তাকে জানান নিজের আতঙ্কের কথা। পাইলটও ধরে নেন, এসএমএস পাঠানো, কানে ইয়ারফোন গোঁজা, ঘেমে যাওয়া, আল্লাহ বলা— এ সব নাশকতার প্রস্তুতিরই লক্ষণ। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাইলট জানিয়ে দেন, নাজিয়া-ফয়সালকে নামিয়ে দেয়া না হলে তিনি টেক-অফ করবেন না। সঙ্গে সঙ্গে বিমানে পৌঁছন গ্রাউন্ড এজেন্ট। নাজিয়া-ফয়সালের কাছে গিয়ে তিনি জানান, তাদের এক বার নামতে হবে। কারণ কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আছে। নাজিয়ারা জিজ্ঞাসা করেন, মালপত্র বিমানে রেখে নামবেন, নাকি সঙ্গে নিয়ে। গ্রাউন্ড এজেন্ট এর পর খুলেই বলেন সবটা। জানান, তাদের মালপত্র নিয়েই নামতে হবে। ওই ফ্লাইটে তাদের সিনসিনাটি ফেরা হবে না।

ফয়সালরা নেমে যাওয়ার পর বিমান রওনা হয়ে যায় সিনসিনাটির উদ্দেশে। প্যারিসের পুলিশ বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ফয়সাল এবং নাজিয়াকে। কেন প্যারিসে এসেছিলেন, কোথায় ছিলেন, কী কী করলেন— সব বিশদে জানার পর পুলিশ আশ্বস্ত হয়। ফয়সাল আলি এবং নাজিয়াকে সিনসিনাটি ফেরার অনুমতি দেয়া হয়।

কাউন্সিল অব আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। মার্কিন পরিবহণ দফতরকে লিখিতভাবে ঘটনাটির কথা জানিয়েছে তারা। নাজিয়া-ফয়সাল বলছেন, মার্কিন বিমান সংস্থাগুলি ইসলাম-আতঙ্কে ভুগছে। সিএআইআর-এর পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, মুসলিমদের হেনস্থা রুখতে অবিলম্বে নির্দেশিকা জারি করুক মার্কিন সরকার।



মন্তব্য চালু নেই