চলছে জাল ভোটের উৎসব, নীরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ

সকাল সাড়ে ১০টা। ছাগনাইয়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের (নীচ তলায়) ১১ নং বুথে দরজায় দুইপাশে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ কনস্টেবল রশিদ ও এক আনসার। পাশে দাঁড়ানো ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) জসিম উদ্দিন ও উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল। এসময় কনস্টেবল রশিদ আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মোস্তফার নৌকা প্রতীকের জাল ভোটারদের ডেকে ডেকে বলছে ‘তাড়াতাড়ি মারেন। এখন কেউ নাই।’ অপর পাশ থেকে ওসি জসিম উদ্দিন বলছে ‘ওই ব্যাটা তোরা লাইন ধর, ভেতরে কাজ চলছে।’

এসআই নজরুল তখন লম্বা লাঠি হাতে লাইনে দাঁড়ানো পরিচিত জাল ভোটারদের সঙ্গে হাস্যরস করছে। কারণ লাইনে দাঁড়ানো সবাই তার পরিচিত ফুলগাজী উপজেলার আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতা। আর তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছে ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হারুন মজুমদার।

বুধবারর (২৫ মে) এই চিত্র ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌরসভা নির্বাচনের ৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে। আর পুলিশ ছিল এসব ঘটনার নীরব দর্শক।

এব্যাপারে ফুলগাজী থানার ওসি তদন্ত জসিম উদ্দিনকে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, ‘ভাই কী করবেন পুরো দেশটাই এভাবে চলছে। প্রতিবাদ করে লাভ কি, যা হওয়ার তাই হবে।’

এদিকে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, অনিয়মের অভিযোগে দুপুর ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করে পুনরায় ভোট দাবি করেছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. আলমগীর। তিনি সকালে ভোট কেন্দ্র ভোট দিতে গেলে তাকে বাধা দেয়া হয় এসময় তিনি ভোট না দিয়ে ফিরে যান। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, তিনি ও তার কোনো সমর্থক ভোট দিতে পারেনি। আগেরদিন বিকেলে থেকে হাজার হাজার বহিরাগত লোক প্রতিটি কেন্দ্র দখল করে একক নিয়ন্ত্রণে নেয়।

সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ হলে বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করে জাল ভোটের মহোৎসব চালায়। ভোর থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের আশপাশে থেমে থেমে মুর্হুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সকাল সাড়ে ৮টায় ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগে ৭০টি ব্যালট বাতিল করেছে প্রিজাইডিং অফিসার আমজাদ হোসেন। তিনি জানান, আমার কেন্দ্রে কাউকে জাল ভোট দিতে দেয়নি। যেগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।

পৌরসভার ১০টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলোকেই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ নির্ধারণ করা হলেও সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে ফেনী ও আশপাশের এলাকার বহিরাগতরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট দিতে দেখা গেছে। দুপুর দেড়টায় দক্ষিণ সতর কেন্দ্রের পাশে ৮টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

এ পৌরসভায় মেয়র পদে বড় দু’দলের পাশাপশি ইসলামী ঐক্যজোটের এক প্রার্থীসহ তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৩৯ জন, তিনটি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে লড়ছেন ৫ জন। ইতোমধ্যে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে একজন এবং একটি সাধারণ ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ পৌরসভার ৩১ হাজার ৪০৯ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৯৪০ জন ও নারী ভোটারের ১৫ হাজার ৪৬৯ জন।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই