চলে গেলেন কাইয়ুম চৌধুরী

বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আর নেই। রোববার রাতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে … রাজিউন)।

রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে রোববার রাতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উৎসবে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যান কাইয়ুম চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর আজ সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিল্পীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গভীর শোক জানিয়েছেন।

আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গলের সঙ্গীত উৎসবের অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মঞ্চে উঠে বক্তব্য রেখেছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি নেমে যাওয়ার পর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বক্তৃতা দিতে আসেন। এ সময় কাইয়ুম চৌধুরী আবার ফিরে এসে বলেন- ‘আমার একটি কথা বলার রয়েছে’।

কিন্তু সে কথা আর বলা হয়নি তার। কিছু বলার আগেই ৮টা ৪০ মিনিটে হঠাৎ পড়ে যান কাইয়ুম চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তখন অনুষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বলেন, পড়ে গিয়ে কাইয়ুম চৌধুরী মাথায় আঘাত পেয়েছেন।

হাসপাতালে নেওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুর কথা জানা যায়। কী কথা তিনি বলতে চেয়েছিলেন, তা আর জানা যায়নি।

কাইয়ুম চৌধুরীর মরদেহ রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সেখানে থাকা সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সাংবাদিকদের জানান, সোমবার সকালে মরদেহ নেওয়া হবে প্রথমে চারুকলা ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে সকাল ১১টায় কাইয়ুম চৌধুরীর মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

সবার শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুর ১টায় মরদেহ জানাজার জন্য নেওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে কাইয়ুম চৌধুরীকে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষে সংস্কৃতিমন্ত্রী জানান।

১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে জন্ম নেওয়া কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৫৪ সালে ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে ফাইন আর্টসে ডিগ্রি নেন।

জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ আঁকার মধ্য দিয়ে এই শিল্পে তার পদচারণা শুরু। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’র প্রচ্ছদশিল্পীও কাইয়ুম চৌধুরী। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিককার অনেক গ্রন্থের প্রচ্ছদও আঁকেন তিনি।

কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন । ১৯৬০ সালে তিনি আর্ট কলেজ ছেড়ে যোগ দেন কামরুল হাসানের নেতৃত্বে নবগঠিত ডিজাইন সেন্টারে। এরপর ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন।

১৯৬৫ সালে আবার আর্ট কলেজে ফিরে যান কাইয়ুম চৌধুরী। চারুকলা ইনস্টিটিউট হওয়ার পর এর অধ্যাপক হিসেবে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন তিনি।

দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত হওয়ার পর এর সঙ্গে যুক্ত হন কাইয়ুম চৌধুরী। তারপর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন তিনি।

তার অসাধারণ শিল্পকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৬ সালে একুশে পদক এবং ২০১৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়াও শেলটেক পুরস্কার, সুলতান পুরস্কারসহ বহু দেশি-বিদেশি সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদক এবং ২০১৪ সালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হন কাইয়ুম চৌধুরী।



মন্তব্য চালু নেই