চাঁদপুরে এখনো নিশ্চিত হয়নি পাটের বস্তার ব্যবহার

সুজন দাস, চাঁদপুর: জেলায় মুড়ির মিলগুলোতে পাটের বস্তা এখনো ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি। সরকার গত বছরের ৩১ মার্চ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে পাটের ব্যাগ/বস্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা জারি করে। বিশেষ করে তখন চাউলের বস্তা গুলোতে পাটের বস্তা ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখনো তা পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।

এদিকে চাঁদপুর শহর ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, মতলব, শাহরাস্তির কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো বড়ো-ছোট আকৃতি মুড়ির বস্তাগুলো প্লাস্টিকের। সেগুলোতে এখনো পাটের বস্তার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

অপরদিকে বর্তমান সরকার দেশের পাট শিল্পকে বাঁচাতে এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। পাট চাষীদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এবং পাটের চাহিদা বাড়াতে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যপণ্য বিশেষ করে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, হলুদ, মরিচ, চিনিসহ আরো কয়েকটি খাদ্যপণ্য প্লাস্টিকের বস্তার পরিবর্তে পাটের বস্তা করে বাজারজাত করার নির্দেশ প্রদান করেন।

কিন্তু সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে সর্বত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিকের বস্তা। শহরের ঐতিহ্যবাহী ও প্রসিদ্ধ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এলাকা পুরাণবাজার, নতুনবাজার, পাল বাজার, বিপণীবাগসহ জমজমাট আরো কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চকচকে প্লাস্টিকের বস্তা করে উল্লেখিত খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে রয়েছে আপত্তি।

কয়েকজন ক্রেতার সাথে আলাপকালে তারা জানান, পাটের বস্তাগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। বিশেষ করে বস্তা হিসেবে চাল ক্রয় করতে অনেক সুবিধা। বস্তার ভেতরে থাকা চালগুলো সহজে দেখতে পাওয়া যায়। যে কারণে অসাধু দোকানিরা আমাদেরকে ঠকাতে পারে না।

সম্প্রতি পাটের বস্তা ব্যবহার না করায় হাজীগঞ্জ বাজারে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অথচ জেলার অন্য উপজেলা গুলোতে পাটের বস্তা ব্যবহার নিশ্চিত করণে প্রশাসনের নজরধারী জরুরী হয়ে পড়েছে। ফলে সরকার পাট শিল্পের ঐতিহ্য ফিরে আনতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি যেসব ব্যবসায়ী পাটের বস্তায় চাউল বা পণ্য সামগ্রী ক্রয় করছেন তাদের ব্যবসার লাভ-ক্ষতির বৈষম্য ঠিক থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে মুড়ির মিল গুলোতে মুড়ি বাজার ধুম পড়েছে। জেলার বাবুরহাট বিসিক শিল্পনগরী বিসিক মুড়ি মিল, শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজার পাটোয়ারি মুড়ি মিল ও উয়ারুক স্টেশন বাজার সংলগ্ন মক্কা মুড়ি মিলগুলোতে হরদমে প্লাষ্টিকের বস্তায় চাউল মজুত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘খাদ্য পণ্য সরবরাহে প্লাষ্টিকের বস্তা ব্যবহার নিষিদ্ধের আইনটি প্রসঙ্গে তারা অবগত রয়েছেন। পর্যায় ক্রমে তারা পুরোপুরি প্লাষ্টিকের বস্তা ব্যবহার বন্ধ করবেন।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা পাটের বস্তায় চাউল ক্রয় করছি। প্রতি বস্তার মূল্য ৪০ টাকা আর প্লাষ্টিকের বস্তার প্রতি মূল্য মাত্র ১০ টাকা। এতে করে প্রতি বস্তায় ৩০ টাকা সাশ্রয়ী পাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অথচ মুড়ির দাম একই দর থাকছে। প্রশাসন প্লাষ্টিকের বস্তা ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পাটের বস্তার মূল্য প্লাষ্টিক বস্তার সাথে সমন্বয় করে নির্ধারণ করে করলেই ব্যবসায়ীরা পাটের বস্তা ব্যবহারে আগ্রহী হবেন।

জানতে চাইলে জেলা পাট অধিদপ্তরের মূখ্য পরিদর্শক মো. ইসমাইল দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকার ছয়টি পণ্যের উপর পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা শীঘ্রই প্লাষ্টিকের বস্তা ব্যবহারকারী মুড়ির মেইলগুলোতে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করবো।’

জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এন এম রেজাউল ইসলাম মুঠোফোনে আওয়ার নিউজকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেলায় কয়েকটি বাজারে প্লাষ্টিকের বস্তা ব্যবহারের দায়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পাট অধিদপ্তরের পাশাপাশি আমরাও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।’



মন্তব্য চালু নেই