চাইলে আপনিও ফুলের ব্যবসা করে খুব সহজেই হতে পারেন সাবলম্বী

ভালোবাসার প্রতীক ফুল। প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রথম পরিচয় ফুল ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। প্রেম নিবেদন ছাড়াও ফুলের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। ফুল পছন্দ করে না এমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।এখন ক্লাস পার্টি কিংবা ছোটখাট অনুষ্ঠানও ফুল ছাড়া বেমানান।

দৈনন্দিন জীবনে ফুলের এই ব্যাপক চাহিদা পূরণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। কেউ পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে। কেউ সখের বসে।

কেউ আবার পেশা হিসাবে জড়িয়ে পড়ছেন ফুল ব্যবসার সাথে। বিজয় দিবস। মাতৃভাষা দিবস এবং স্বাধীনতা দিবস যেকোন দিবস আসুক না কেন ফুল চাষিরা বসে নেই। বসে নেই দোকানিরাও।

চাইলে আপনিও আসতে পারেন স্থায়ী বা মৌসুমি ফুল ব্যবসায়ী হিসাবে। ঢাকার বিভিন্ন ফুলের দোকানীর মুখোমুখি হয়ে শাহবাগ ও আগারগাঁও এর ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমিতরি সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এবং বাচ্চু মিয়ার সাথে কথা হয়।

কি কি কাজে ফুল ব্যবহার করা হয়?

দৈনন্দিন জীবনে ঘর সাজানো, গায়ে হলুদ, বিয়ের স্টেজ, বরের গাড়ি, কনের গাড়ি, বাসরঘর, বৌভাত, জন্মদিন, সেমিনার, সমাবেশ কিংবা রাষ্ট্রীয় বিশেষ বিশেষ দিনে ফুলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এখন শোক দিবসের অনুষ্ঠানেও ফুলের কদর বেড়েছে। সারা বছর ই ফুল বাজারে পাওয়া যায়।

তবে নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিশেষ রঙের ফুল আসে বাজারে। তাই এই সময়কে ফুলের ঋতুও বলা হয়। এ সময় রজনীগন্ধা, বেলি, বকুল, সাদা গোলাপ, লাল গোলাপ, লিলি, অষ্টার, অর্কিড, জুইবেলি, কাটবেলিসহ আরও অনেক রকম ফুল বাজারে পাওয়া যায়।

কোথা থেকে আসে ফুল?

সাভার শাদিখাপুর, লায়নগঞ্জ, নাটোর, যশোর গদখালি, পানিসাড়া, মেহেরপুর, মহেশপুর, নাপাড়া মোড়, বানপুর, জীবন নগর, চুয়াডাঙ্গাসহ আরও কিছু জায়গা থেকে ফুল ঢাকাতে আসে। বরিশাল থেকে ও কিছু পরিমাণ ফুল ঢাকাতে আসে। তবে শরিয়তপুরের ফুল চাষি বিল্লাল হোসেন বলেন বরিশাল, শরিয়তপুর এর বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা তার মাধ্যমে ঢাকাতে ফুল পাঠান।

কোথায় পাবেন ফুল?
প্রতিদিন সকালে শহীদ জিয়া শিশু পার্কে পাইকারি ফুলের দোকান বসে। ঢাকার বাহির থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা চাষিরে কাছ থেকে পাইকারি বাজারের ফুল নিয়ে আসেন।

আগারগাও কিংবা শাহবাগ থেকে পাইকারির ভাবেও ফুল কিনে নিয়ে যায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। শাহবাগের পাইকারি ফুলই খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ক্রেতার হাতে চলে যায়’।

ফুলের দোকানের জন্য কি কি দরকার?

ফুলের দোকানের জন্য ৭ থেকে ৮ স্কয়ার ফিটের একটি রুম নিজের পছন্দমত সাজিয়ে নিতে হবে। ফুল রাখার জন্য মাঝারি সাইজের তিন চারটি বালতি, একটি স্প্রে, একটি কাচি, একটি হেক্সো, মোড়ানো র‌্যাপিং, স্লিপিং, রিবন, সুতা এবং ডালা বানানোর জন্য ছোট একটি টেবিল দরকার।

নিতে হবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ?

চাইলে ঘরের কাছে ফুল উৎপাদন করা সম্ভব না। ফুল চাষের জন্য যেমন ফুল চাষির প্রশিক্ষণ দরকার তেমনি ফুল বিক্রির জন্যও ফুল দোকানিকে নিয়ম কানুন জানা দরকার।

দীর্ঘ ৩০ বছর ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ী সভাপতি ও শাহবাগ বটতলায় অনিকা পুষ্প দোকনের মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সনদ আর অভিজ্ঞতা একজন ফুল ব্যবসায়ীর জন্য অনেক জরুরি।

সেজন্য ঢাকায় ফুল দোকনের জন্য প্রথমেই শাহবাগ বা আগারগাও এর ফুল সমিতি থেকে দোকানের অনুমতি এবং ন্যূনতম একমাসের অভিজ্ঞতা সনদ থাকতে হবে। তারপর জায়গা নির্বাচন করে দোকান দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারে যে কেউ।

কিভাবে সতেজ রাখবেন দোকানের ফুল?

ফুলের সতেজতা এবং সংরক্ষণ নিয়ে ফুল দোকানদার আবুল কালাম আজাদ ও বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘সাধারণ ফুলগুলো সবোর্চ্চ দেড়দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে তারপর পছন শুরু হয়।

তবে অর্কিড, লিলি, ঝাড়পড়া ফুল ৭ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত থাকে। ফুল সতেজ রাখার জন্য পানির স্প্রে ছাড়া কিছু ব্যবহার করা উচিত না।

অনেকে বিভিন্ন রকমের ফ্লেবার যুক্ত স্প্রে ব্যবহার করেন। এতে ফুলের প্রাকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। পাইকারি বাজার থেকে ফুল কেনার পর ময়লা পরিস্কার করে একটু হেলানোভাবে বালতি বা জারে রাখতে হবে।

ধুলাবালি মুক্ত জায়গায় ফুল বেশি সতেজ থাকে। তবে ফুলের ধরণ বুঝে জারের মধ্যে পানি রাখতে হবে। বেশি পানি থাকলে অনেক সময় ফুল পচে যায়।

দৈনিক কেমন আয় হতে পারে ফুলের দোকানে?

ফুলের দোকানের বেচাবিক্রির কোন লিমিটেশান নাই। দোকান আর ফুলের ধরণের উপর নির্ভর করে এই বিক্রি। তবে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়াও ঢাকার ফুল দোকানগুলোতে দৈনিক প্রায় ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

তবে শাহাবাগের ফুলতলা দোকানি ফায়েল শেখ বলেন দৈনিক সব খরচ বাদ দিয়ে কোন মতে চার পাঁচ জনের সংসার চলে তাদের।

ফুলের দোকানে কাজ করা যত সহজ তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কিভাবে ফুলের যত্ন নিতে হয়, ফুল দিয়ে কিভাবে বিভিন্ন রকম মালা, জুড়ি বা ডালা বানাতে হয়।

তাই মৌসুমি কিংবা খণ্ডকালীন দোকান দেওয়ার আগে অবশ্যই ফুল সম্পর্কে জানতে অবহেলা করবেন না।শাহবাগ বা আগারগাও এর ফুল দোকানগুলোতে খণ্ডকালীন কাজ করে আপনিও হতে পারেন একজন দক্ষ ফুল দোকানী।



মন্তব্য চালু নেই