চিকিৎসক সংকটে পাবনা মানসিক হাসপাতাল

আজ ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছর বেশ ঘটা করেই উদযাপন করা হয় দিবসটি। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দেশের মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল’-এ। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসা সেবা চলছে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক আর মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন সহকারী অধ্যাপক দিয়ে।

এ ছাড়া দালালদের উৎপাতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেক রোগীর স্বজনরা। নানা সংকট আর সমস্যায় চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন ঘটলেও দীর্ঘদিনেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি পাবনা মানসিক হাসপাতালে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে শহরের হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জায়গার ওপরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল ৬০টি। সময়ের চাহিদায় যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ শয্যায়। কিন্তু এত বড় হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমানে মাত্র ৪ জন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছেন পাবনা মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন সহকারী অধ্যাপক।

সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, হাসপাতালের মোট ৫২২টি মঞ্জুরিকৃত পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৫১টি পদ। এসব পদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকের ৩০টি পদের মধ্যে শূন্য ২৪টি, প্রথম শ্রেণির অন্যান্য ৭টি পদের মধ্যে ২টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ১৯৬টি পদের মধ্যে ৩৬টি, তৃতীয় শ্রেণির ১১৯টি পদের মধ্যে ২২টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ১৭০টি পদের মধ্যে ৬৭টি পদ শূন্য। শূন্যপদের মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট ২টি, ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিস্ট ১টি, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ১টি, ক্লিনিক্যাল এসিস্টেন্ট ৭টি, মেডিক্যাল অফিসার ৫টি, সাইকিয়াট্রিক সোস্যাল ওয়ার্কার ১টি, সহকারি রেজিস্ট্রার ২টি, এসএলপিপি ১টি, ডেন্টাল সার্জন ১টি, অ্যানেসথেটিস্ট ১টি, আবাসিক সাইকিয়াট্রিস্ট ১টি, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ১টি, বায়োকেমিস্ট ১টি, নার্সিং সুপারভাইজার ২টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৭টি, স্টাফ নার্স ১৭টি সহকারী নার্স ৬টি, লন্ড্রি সুপারভাইজার ১টি, ড্রাইভার ১টি, সহকারী অকুপেশনাল থেরাপিস্ট ৪টি, স্টেনোগ্রাফার ১টি, পরিসংখ্যান সহকারী ১টি, ঈমাম ১টি, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ৪টি, ইইজি টেকনিশিয়ান ১টি, টেলিফোন অপারেটর ১টি, টেইলর ১টি, এমএলএসএস ২১টি, ওয়ার্ডবয় ২৭টি, কুক মশালচী ৭টি, মালি ৩টি, সুইপার ৯টি পদ খালি রয়েছে অনেকদিন ধরে। এতগুলো পদ শূন্য থাকায় ৫০০ রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসক সংকট। চিকিৎসক সংকটের চিন্তায় অন্য সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। ৫০০ বেডের একটি হাসপাতালে ৪ জন মেডিক্যাল অফিসার কাজ করছেন। এখন আপনারা ধারণা করুন যে, ৫০০ বেডের একটি হাসপাতাল ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে কিভাবে চলে। আর পোস্টিং কোনো কনসালটেন্ট নেই, মেডিক্যাল কলেজে যারা সহকারী অধ্যাপক আছেন তারাই এখানে কাজ করছেন, সেজন্য আমরা কিছুটা সাপোর্ট পাচ্ছি। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো সমাধান হচ্ছে না।’

অপরদিকে হাসপাতালের আশপাশসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্র নামে ক্লিনিক গড়ে উঠায় দালালদের খপ্পরে পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেক রোগীর স্বজনদের। এর বাইরে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে এসেও হয়রানি হন কেউ কেউ।

এসব বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গাজী সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে আমরা ১১০ থেকে ১৩০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে রোগী নিয়ে আসে খুব সকালে, তাদের বসে থাকতে হয় অফিস খোলা পর্যন্ত। এ সময় অনেক দালাল তাদের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে রোগীরা যাতে কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে অন্য কোথাও না যায়, হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য আউটডোরে আমাদের সশস্ত্র আনসার গার্ড নিয়োগ করা আছে। তারা সবসময় সতর্ক আছে, পাশাপাশি আমাদের কর্মচারীরাও সতর্ক থাকে।

মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগসহ বিভিন্ন জরাজীর্ণ ভবন উন্নয়ন করে চিকিৎসা সেবায় গতি ফেরানোর দাবি করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই