চিত্রার দু’পাড় যেন নতুন সুন্দরবন (ভিডিও)

বাগেরহাট লোকালয়ে চিত্রা নদীর চরে নতুন সুন্দরবন গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ বন দেখে মনে হবে যেন সুন্দরবনেরই একটা অংশ। তাই স্থানীরা একে “নতুন সুন্দরবন” নামকরণ করেছে।

এই নতুন সুন্দরবনকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে যেন আনন্দ আর আগ্রহের শেষ নেই। প্রায় ১০ কিলোমিটির জুড়ে চিত্রা নদীর দু’পাশে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই বন দেখতে ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে অনেক ভ্রমণ পিপাষু মানুষরা।

বিশ্ব ঐতিহ্যে ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা চিত্রা নদীর বিস্তৃর্ণ চর ও আশপাশে নদীর দু’পাড়ে ১৫-২০টি গ্রাম জুড়ে গড়ে উঠেছে এই বন। উপজেলার রায়গ্রাম, শুরিগাতী, খিলিগাতী, করাতদিয়া, ডুমুরিয়া, আড়ুলিয়া, খড়িয়াসহ প্রায় ১৫-২০টি গ্রাম মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

এখানকার অধিকাংশ বাড়ির আঙিনাসহ আশপাশে আবাদি-অনাবাদি জমিতেও এখন গোলপাতা, কেওড়া, ওড়া, সুন্দরীসহ নানা প্রজাতির গাছ প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠছে। এছাড়া নদীর দু’কূল জুড়ে চিত্রা নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে গাছের সংখ্যা।

2015_10_05_11_44_42_bI4idqeVUYlR6kDmrcRnBcxVomzPHB_original

বাঘ-হরিণের দেখা না মিললে ও সুন্দরবনের কিছু কিছু বন্যপ্রাণীর দেখার কথা জানিয়েছে এলাকাবাসী। পাখিদের কলকাকলিতে বন এখন মুখরিত। মেছো বাঘ, বাঘডাসা, খাটাশ, বিষধর সাপ, তক্ষক, বনবিড়াল, শিয়াল, গুঁইসাপসহ বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণির বিচরণভূমি।

গাছে গাছে মৌচাক। মাছরাঙা, ঘুঘু, শালিক, টিয়া, পানকৌড়ি, বক, দোয়েল, ঘড়িয়াল, টুনটুনিসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির পাখির সন্ধান মিলেছে এখানে। এসব পাখিদের কলকাকলিতে গোটা বন এখন মুখরিত। যেন সুন্দরবনেরই একটা অংশ।

অসংখ্য সুন্দরবনের উদ্ভিদ জন্ম নেয় এখানে। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে যেমন আশার আলো দেখা দিয়েছে তেমনি পরিবেশের জন্য এ বন এখন আর্শীবাদ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে এলাকার লোকজন তাদের নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে হাজার-হাজার টাকার গোলপাতা বিক্রি করছেন। জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় কাঠের চাহিদা মেটাচ্ছেন। পাশাপাশি এখানকার মনোরম দৃশ্য মুগ্ধ সকলে। বর্তমানে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ পুরোপুরি রূপ নিয়েছে সুন্দরবনে। প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমিতে পরিণত হচ্ছে এলাকাটি। নতুন সুন্দরবনকে রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এলাকার অধিকাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

2015_10_05_11_44_59_srRDIuUtPMMXMVmWOpd2hOzmUlN1jH_original

উপজেলার ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রকৃতিপ্রেমী হরেন্দ্রনাথ রানা তার অনুভূতি প্রকাশ করে জানান, এখন বাড়িতে বসে সুন্দরবনের দৃশ্য উপভোগ করতে পারছি। চিত্রা নদীর কারণে সুন্দরবন যেন নতুন রূপে এখানে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। নদীর দু’পাড়ে এখন সবুজের হাতছানি কেবলই কাছে টানছে।

উপজেলার শুরিগাতী গ্রামের চিত্রা নদীর পাড়ের বাসিন্দা ফিরোজুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদী পাড়ের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়। সুন্দরবন থেকে উঠে আসা বিভিন্ন নদী চিত্রা নদীর সাথে যোগ হয়েছে। সুন্দর বনের বিভিন্ন গাছের বীজ নদীতে ভেসে সরসরি এখানে চলে আসে। এসব বীজ থেকে গাছের জন্ম হচ্ছে। এতে গ্রামগুলো দিন দিন ঘন বনে আচ্ছাদিত হচ্ছে।

চিতলমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন জানান, সুন্দর বন থেকে উঠে আসা বিভিন্ন নদীর সঙ্গে চিত্রার সংযোগ রয়েছে। যে কারণে নদীর মাধ্যমে সহজে এখানে বনাঞ্চল গড়ে উঠছে। এটা প্রকৃতির আশীর্বাদ বলে তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রাণি ও উদ্ভিদ বিভাগের প্রফেসর বুলবুল কবিরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সুন্দরবনের মূল ভূখণ্ড এক সময় মাদারীপুরসহ উত্তর অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কালে কালে যা ছোট হয়েছে। কিন্তু এখানকার মাটিতে সুন্দর বনের বিভিন্ন গাছ জন্মানোর কার্যকরী ক্ষমতা রয়েছে। উপকূলীয় এ অঞ্চলে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে নদী তীরে নতুন বন গড়ে ওঠা সম্ভব।

2015_10_05_11_48_08_vXzpJUSJge254Qp3GxBmse42aQz6FA_original

পূর্ব সুন্দর বনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, এ বন প্রকৃতিক পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখবে। এটি যথাযতভাবে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

সমাজিক বন বিভাগের ডিএফও মো. হারুনআর রশিদ মজুমদার সম্প্রতি এই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি নতুন এ বন রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার ব্যাপারে নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হলে এখানে হরিণ-বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানান। ভ্রমণার্থীদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য একটি বড় ধরণের প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহতি করবেন বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সরকারি খাস জমি ও নদীর চরে এ ধরনের বনাঞ্চল গড়ে উঠলে সেটা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’ বাংলামেইল

দেখুন ভিডিওটি…..



মন্তব্য চালু নেই