চিনির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি

যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই দেশের বাজারে চিনির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বছরে ১৫ লাখ টন চিনির চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় ১২ লাখ টন। এরপরও গত বছরের জুলাই থেকে চলতি এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে ১২ লাখ ৭৪ টন। এ হিসাবে বাজারে চিনির সংকট থাকার কথা নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুনাফালোভী মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরাই কারসাজি করে চিনির দাম বাড়িয়েছেন। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এ সুযোগ নিচ্ছেন তারা।

সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্য অনুসারে, রাজধানীতে এখন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। এভাবে দাম বাড়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো যুক্তি নেই ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা কেউ সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছে বলে মত দিয়েছেন, কেউ উৎপাদনে ঘাটতির কথা বলছেন, আবার কেউ আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দর বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করছেন।

কারওয়ানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. বাবলু বলেন, রমজানের শুরুতে দাম বাড়া শুরু হয়েছে। সরকার প্রথম দিকে মনিটরিং ও সরবরাহ নিশ্চিত করলে দাম এতটা বাড়ত না। পুরো চিনির বাজার কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যটির দাম বাড়িয়েছে। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।

জানা গেছে, এস আলম, সিটি গ্রুপ, আবদুল মোনেম, দেশবন্ধু, ইগলু, মেঘনা, পারটেক্সসহ বেশ কয়েকটি শিল্প গ্রুপ পরিশোধিত চিনি সরবরাহ করে। এসব কোম্পানি দেশে উৎপাদিত আখ ও বিভিন্ন দেশের অপরিশোধিত চিনি আমদানির মাধ্যমে পরিশোধন করে বাজারজাত করে। দাম বৃদ্ধির পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলেই দাম কমাতে পারে না।

ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে চিনির বাজার স্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে কারসাজি হচ্ছে। নইলে এক বছরের ব্যবধানে দাম দ্বিগুণ হবে কীভাবে।’

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও ঘাটতির অজুহাত বা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে দেশে খুচরা বাজারে চিনির দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রীষ্ম মৌসুমে ও রোজার সময় চিনির ব্যবহার বেড়ে যায়। দ্বিগুণ চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় প্রতি বছর এ সময় পণ্যটির দাম নিয়ে কারসাজির সুযোগ নেন ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছর চিনির দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণ না বাড়লেও চলতি বছর অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি মিল মালিকরা সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করছেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, চিনির দাম এত বাড়ার কথা নয়। মজুদ, আমদানি পরিস্থিতি এবং এলসি নিষ্পত্তির বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় চাহিদার তুলনায় বেশি চিনি রয়েছে। তাই কোনোভাবেই চিনির দাম ৭০ টাকা কাম্য নয়। যারা অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি করছেন, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। আইনগতভাবেই সেসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদিও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই