ছাত্রীদের টয়লেটে গোপন ভিডিও, অতঃপর…

রাজশাহীতে অবস্থিত বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখায় মেয়েদের কমনরুম ও টয়লেটে মুঠোফোনে গোপন ভিডিও করার অপরাধে তিন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

সম্প্রতি বরেন্দ্রের তালাইমারি শাখায় এ ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল হোসেন চৌধুরী। সোমবার সকালে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে এক সাংবাদিকের সঙ্গে খাবার আচরণ করেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব ব্যবস্থাপনা (এইচআর) শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইসহাক। পরে বিষয়টি উপাচার্যকে জানানোর পর তিনি ওই কর্মকর্তাকে সতর্ক করেন।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ও কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মাসের প্রথম দিকে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের তালাইমারি শাখার নৈশ্যপ্রহরী উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের কমনরুম ও টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ মুঠোফোনে ভিডিও চালু করে চিত্র ধারণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগটি করেন ওই শাখার ঝাড়ুদার এক মহিলা। পরে বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি জানার পর তদন্ত করে এর প্রমাণ পায়। পরে ভিডিও করার বিষয়টি গোপন রাখার জন্য উজ্জ্বল ও ওই ঝাড়ুদার মহিলাসহ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরশাদ আলীকে চাকরিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, নৈশ্যপ্রহরী উজ্জ্বল দীর্ঘ প্রায় নয় বছর ধরে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল হোসেন চৌধুরীর বাসায় কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি ওই কর্মচারীকে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈশ্যপ্রহরীর চাকরি দেন। ওই প্রহরীর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের টয়লেটে গোপন ভিডিও করার অভিযোগ উঠলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন উপ-উপাচার্য।

বিষয়টি জানাজানি হলে নৈশ্যপ্রহরীসহ তিনজনকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি দণ্ডবিধির আওতায় পড়লেও পুলিশকে জানানো হয়নি। কয়েক দিন আগে বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। লোকমুখে প্রচার হতে থাকে, ওই ব্যক্তির কাছে এখনো ছাত্রীদের গোপন ভিডিও আছে। এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে সোমবার সকালে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিতে গেলে মানব ব্যবস্থাপনা (এইচআর) শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইসহাক রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সানশাইন ও রাবি প্রতিনিধির সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে বিষয়টি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে মৌখিকভাবে জানানো হয়।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম ওসমান গনি তালুকদার বলেন, ‘আমি তাকে অফিসে ডেকে সতর্ক করে দিয়েছি। যাতে পরবর্তীতে কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ না করে।’

ছাত্রীদের টয়লেটে ভিডিও করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম। তাই কিছু জানি না। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়গুলো দেখাশোনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য।’

যোগাযোগ করা হলে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল হোসেন চৌধুরী কর্মচারীদের চাকরি হারানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগ করি। তাই কি কারণে তাদের চাকরি গেছে তা জানি না।’ তবে ঝাড়ুদারের চাকরি যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

ওই ঘটনার পর নিজ বাসা থেকে উজ্জ্বলকেও চাকরিচ্যুত করেছেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির বলেন, ‘সৃষ্ট অপরাধে ওই ব্যক্তিকে পুলিশে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা করেনি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্টের ভয়েই তাদের শুধু চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’দ্যরিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই