ছেড়ে কথা বলবে না বাংলাদেশ

এশিয়ার প্রত্যেকটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ এবং তাদের সমর্থকদের চোখ এখন এশিয়াকাপের দিকে। ২০১৬ সালের প্রথম বড় কোনো টুর্নামেন্টে তাদের দল কেমন ফলাফল করবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। টুর্নামেন্টে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টি-২০ ফরম্যাটে হতে যাচ্ছে এই আসর। আর প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশ ও টি-২০ ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারত। বাংলাদেশ-ভারতের ওপেনিং ম্যাচটি হবে ঢাকার মিরপুরের শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।

টি২০ ফরম্যাটের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্সের বিচারে এগিয়ে রয়েছে ভারত। সর্বশেষ তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। আর বাংলাদেশ সর্বশেষ চার ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২-২ ড্র করে।

তবে সর্বশেষ ওয়ানডে মুখোমুখিতে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে জিতে কোনো রকমে হোয়াইটওয়াশ এড়ায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। তার উপর ঘরের মাঠে খেলা হওয়ায় গ্যালারি ভর্তি সমর্থদের সামনে এগিয়ে থাকবে টাইগার বাহিনী।

দুই দলের ব্যাটিং শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকবে ভারতই। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপে তাদের অনেক বিকল্পও রয়েছে। বিশেষ ওপেনিংয়ে শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার পর বিরাট কোহলি এদের যে কেউ যেকোনো সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। এর পর সুরেশ রায়না ও অধিনায়ক ধোনি তো রয়েছেনই। দারুণ ফর্মে রয়েছেন কোহলি। তবে ইনজুরির কারণে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ম্যাচে শেষ পর্যন্ত খেলতে পারবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়।

নিজের মাঠ আর পরিচিত কন্ডিশনে কম যাবে না বাংলাদেশও। যদিও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বড় শক্তি ওপেনার তামিম ইকবাল নেই। তারপরও আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারের সাথে থাকবেন বিপিএলে ভালো পারফর্ম করা ইমরুল কায়েস। তবে বাংলাদেশর ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর ব্যাটে ঝড় উঠলে প্রতিপক্ষ বিধ্বস্ত করতে পারেন সাব্বির রহমানও।

ব্যাটিং ছাড়াও দুইপক্ষের একটা বড় শক্তি বোলিংয়ে। দুই দল বরাবর স্পিন নির্ভর হলেও এবার পেসেও কম ভরসা করবেন না তারা। ভারতের জন্য ত্রাস হতে পারেন বাংলাদেশের নতুন সেনসেশন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে প্রথম সাক্ষাতে তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে ধোনির বাহিনীর ব্যাটিং মেরুদণ্ড তো ভেঙে ছিলেন ‘কাটার মাস্টারই’। সেই সাথে তাসকিন আহমেদ, আল-আমিন হোসেন, নবাগত আবু হায়দার রনি ও অধিনায়ক মাশরাফি তো আছেনই। আর স্পিনে সাকিবকে সঙ্গ দেবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আরাফাত সানি।

বিপরীতে ভারতের বোলিংয়ের বড় শক্তি স্পিন। রবিচন্দন অশ্বিনের সঙ্গে আছেন রবীন্দ্র জাদেজা। তাদের সঙ্গ দেবেন সুরেশ রায়না হার্দিক পান্ডে, পবন নেগি ও অভিজ্ঞ হরভজন সিংহ। পেস আক্রমণও যথেষ্ট শক্তিশালী ভারতের। নবাগত জাসপ্রিত বুমরাহ’র সঙ্গে রয়েছেন অভিজ্ঞ আশিশ নেহরা। তবে মোহাম্মদ সামির ইনজুরি থাকায় দুর্বলতা কিছুটা হলেও দেখা যাবে ভারতীয় বোলিং শিবিরে।

মুখোমুখি সাক্ষাতে অবশ্য বেশ এগিয়ে ভারত। ৩২ সাক্ষাতে ২৬টিতে জিতেছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশের জয় পাঁচটিতে। আর দুটি টি-২০ সাক্ষাতে অবশ্য দুটিতে জিতেছে ভারত। ২০০৯ বিশ্বকাপের প্রথম টি-২০ ম্যাচে ২৫ রানের হারের পর মিরপুরের ম্যাচে ৮ উইকেটে জেতে ভারত।

মিরপুরের পিচ সব সময়ই স্পোটিং পিচ। এখানে বোলার ব্যাটসম্যান উভয়েরই ভালো করার সুযোগ রয়েছে। তবে সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে সবুজ পিচই দেখা গেছে। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণের সামনে খাবি খেতে দেখা গেছে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে। খেলা যেহেতু সন্ধ্যার পরে, তাই ম্যাচে টস অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আবার রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশিরের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। যেকোনো দলের জন্য পরে ফিল্ডিং করাটাও কঠিন হবে।

টি২০তে মিরপুরের সর্বোচ্চ রান উঠেছে ২০৪। ২০১৩ সালে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষেই ওই রান করেছিল নিউজিল্যান্ড। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন ৭২ রানে অলআউট হয়েছিল আফগানিস্তান।মিরপুরে বাংলাদেশও ১০০ রানের আগে তিনবার আউট হয়েছে।পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৫ রানে, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯৬ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৮ রানে।

মিরপুরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ১৮৯ রান। নিউজিল্যান্ডের করা ২০৪ জবাবে ওই রান করেছিল টাইগাররা। মিরপুরে ভারতের সর্বোচ্চ ইনিংস ১৭৬ রান। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭২ রানের জবাব দিতে নেমে ওই তুলে ৬ উইকেটে জিতেছিল ধোনিরা।

মিরপুরে সর্বোচ্চ ১৭৮ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে জিতেছিল ক্যারিবীয়রা। আর সর্বনিম্ন ১৩৫ রান করেও ম্যাচ জেতার রেকর্ড পাকিস্তানের। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৫০ রানের জিতেছিল মিসবাহ বাহিনী।

মিরপুরে আগে ব্যাট করে সবচেয়ে বড় জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৪ রানে জিতেছিল তারা। তবে পরে ব্যাট করে বড় জয়ের রেকর্ডটা বাংলাদেশের। আফগানদের বিপক্ষে ৯ উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা। রানের ব্যবধানে সবচেয়ে ছোট জয় নিউজিল্যান্ডের। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৫ রানে জিতেছিল তারা। আর উইকেটের ব্যবধানে ছোট জয়টি বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩ উইকেটে হারিয়েছিল তারা।

মিরপুরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটা এক ভারতীয়র। ৬ ম্যাচে চারটি অর্ধশতকসহ ৩১৯ রান করেছেন বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানটা মুশফিকুর রহিমের। ১৪ ম্যাচে ২৬২ রান করেছেন মুশফিক। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদের। বাংলাদেশের বিপক্ষেই অপরাজিত ১১১ রান করেছিলেন পাকিস্তানি ওপেনার। বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরধারী তামিম ইকবার অবশ্য এবার দলে নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৮ রান করেছিলে টাইগার ওপেনার।

মিরপুরে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন বাংলাদেশের পেসার আল-আমিন হোসেন। ৮ ম্যাচে ১৪ উইকেট পেয়েছেন ডান হাঁতি এ পেসার। আর ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যামুয়েল বর্দির সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয়স্থানে রয়েছেন ভারতের রবিচন্দন অশ্বিন।

বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচে বাধা হতে পারে বৃষ্টি। রাতে ঢাকায় কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে শুধু আজনই নয়, আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি হবে। ওয়েদার ডটকম দেখা যাচ্ছে রাতে ঝড়সহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৮০ শতাংশ।

কে জিতবে এই ম্যাচে। অতীত ইতিহাস, সাম্প্রতিক ফর্ম ও দলীয় শক্তির বিচারে ভারত এগিয়ে। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের চালানো জরিপে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা ৫৬ শতাংশ। বাংলাদেশের ৪৪ শতাংশ। তবে খেলা যেহেতু মিরপুরে তাই কমে ছাড়বে না বাংলাদেশেও। তাড়াছা লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সব কিছু মিলিয়ে একটি হাইভোল্টেজ ম্যাচই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মিরপুরে।

সম্ভাব্য বাংলাদেশ দল: মাশরাফি বিন মর্তুজা(অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিথুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম(উইকেটরক্ষক), সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, আল আমিন হোসেন, আরাফাত সানি, এবং নুরুল হাসান সোহান।

সম্ভাব্য ভারত দল: মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং, বিরাট কোহলি, আশিস নেহরা, হার্দিক পান্ডে, রবীন্দ্র জাদেজা রবিচন্দ্রন অশ্বিন, এবং জাসপ্রিত বুমরাহ।



মন্তব্য চালু নেই