ছোট ফ্ল্যাটে আসবাবের বিকল্প কেবিনেট

সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে কিনেই ফেলেছেন ছোট্ট একটি ফ্ল্যাট, নিজের একটি নিশ্চিন্ত আশ্রয়। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেন না কম পরিসরে কিভাবে নিজের মত করে সাজাবেন। পুরানো আসবাবপত্র রাখতে গিয়েই আপনার ফ্ল্যাট হয়ে যাচ্ছে কানায় কানায় পূর্ণ। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে আধুনিক স্টাইলে কেবিনেট ব্যবহার করে সাজানো ছোট অথচ খোলামেলা ফ্ল্যাট। আপনার ফ্ল্যাট যদি বদ্ধ হয় চারপাশের হাজারো দালানকোঠার ভীড়ে সেক্ষেত্রেও একটু বুদ্ধি করে ব্যবহার করা কৃত্রিম আলো পারে আপনার ফ্ল্যাটের গুমোট ভাব দূর করতে। স্বল্প পরিসরে ফ্ল্যাট সাজানোর নানাদিক নিয়ে কথা বললেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং প্রতিষ্ঠান আর্কস্ফেয়ারের স্থপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুল হক।

রান্নাঘর

আপনার রান্নাঘর যদি হয় ছোট সেক্ষেত্রে খোলা রাখুন কোনো দরজা ব্যবহার না করে। দেয়ালের সাথে লাগানো কেবিনেট ছাড়া আলাদা কোন ফার্নিচার না রাখাই শ্রেয়। কেবিনেট তার মাপ অনুযায়ী জায়গা নেয়ার পর তাহলে আর রান্নাঘরকে ছোট লাগবে না।রান্নার ধোঁয়া আর তা থেকে তৈরী আঁঠালো ভাব থেকে রক্ষা পেতে কিচেন হুড বা চিমনি ব্যবহার করতে হবে। রান্নাঘরে সাবধানে কাজ করার জন্য প্রচুর আলোর প্রয়োজন তাই যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা করতে হবে রান্নাঘরে। জানালা ছোট হলে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে পারেন। রান্না করার সময় সৃষ্ট উত্তাপ সরিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহার করতে হবে এগজস্ট ফ্যান। কেবিনেটের ভেতর জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য আলাদা আলাদা কম্পার্টমেন্ট রাখতে পারেন যেন একই ধরণের সমস্ত দরকারী জিনিস একবারেই পেয়ে যান হাতের নাগালে আর জিনিসপত্র স্তূপাকারে একই জায়গায় জমা না হয়। উপরের দিকে ছাদ পর্যন্ত দুই স্তরে কেবিনেট রাখতে পারেন।

হাতের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য নিচের স্তরের কেবিনেট খোলা রাখতে পারেন, বা ব্যবহার করতে পারেন কাঁচের পাল্লা। উপরের বদ্ধ কেবিনেট ব্যবহার করতে পারেন বড় হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য তৈজসপত্র রাখতে। কিচেন কাউন্টারের স্ল্যাবের নিচেও বদ্ধ কেবিনেট বানাতে পারেন স্টোরেজ হিসেবে। স্ল্যাবের উপরে গ্র্যানাইট পাথর ব্যবহার করলে তা হবে পানিরোধী, নিচের কেবিনেটকে পানির ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে সহজেই। আর আপনার কেবিনেটের উপাদান যদি হয় প্লাস্টিক বোর্ড বা লেমিনেটেড বোর্ড তাহলে নিশ্চিত করুন যে তা পানিরোধী কিনা।

বসার ঘর

আপনার বসার ঘর হওয়া উচিৎ খোলামেলা, প্রচুর আলো বাতাস যেন খেলে যেতে পারে ঘরময়। সরাসরি আলো বিরক্তিকর মনে হলে ফলস সিলিং দিতে পারেন বিভিন্ন ডিজাইনে যেন আলোর উৎস লুকানো যায়। ফলস সিলিং আলো আঁধারির খেলা তৈরী করে আপনার বসার ঘরকে দিতে পারে আলাদা লুক। বসার ঘরের দেয়ালগুলো সাজাতে পারেন ওয়ালপেপার দিয়ে বা কাঠের প্যানেলিং করে। একটি বা দুইটি দেয়ালে আলাদা রঙ দিয়ে ফোকাস তৈরী করুন, আপনার বসার ঘর পেয়ে যাবে অন্য এক মাত্রা। তবে বেশি গাঢ় রঙ ব্যবহার না করাই ভাল কারণ গাঢ় রঙ আলো শোষণ করে। টেলিভিশন থাকলে পিছনে বিভিন্ন পাথরের কাজ রাখতে পারেন। টিভির নিচে দেয়াল থেকে বের করা ছোট্ট কেবিনেট রাখতে পারেন স্পীকার ডিভিডি প্লেয়ার জাতীয় জিনিস রাখার জন্য।

টিভির আশেপাশের কেবিনেটে ছোট শোপিস বা মানিপ্ল্যান্ট জাতীয় গাছ এনে দিতে পারে নান্দনিকতার ছোঁয়া। দেয়ালে যদি কোনো শিল্পকর্ম বা ছবি থাকে তাহলে দেয়াল থেকে বা ফলস সিলিং থেকে স্পটলাইট ফেলে ফোকাস করতে পারেন। হাল্কা ছোট একটি বুকশেলফ তৈরী করতে পারেন, জায়গা থাকলে কিছুটা বড়ও করতে পারেন। বসার জন্য সোফা হালকা হলেই ভাল। বা নিচু সোফা বা মোটা কুশন দিয়ে ছোট তোষক বা ডিভান রেখে বসার জায়গা করতে পারেন।

ডাইনিংস্পেস

ডাইনিং ওয়াগন বানাতে হবে ছোট পরিসরেই। উপরের দিকে ছাদ পর্যন্ত বদ্ধ কেবিনেট রাখতে পারেন, নিচের দিকের কেবিনেট রাখতে পারেন স্বচ্ছ কাঁচের। রান্নাঘরের মতই একটি কাউন্টার তৈরী করে নিচে স্টোরেজ কেবিনেট এবং উপরে ওভেন, ব্লেন্ডার, টোস্টার ইত্যাদি রাখতে পারেন যাতে চটপট তৈরী করে নিতে পারেন হালকা খাবার। আপনার ডাইনিং স্পেস ছোট হলে কাঁচের টেবিল ব্যবহার করুন, জায়গাটিকে প্রশস্ত দেখাবে। আর ৪ জনের টেবিল হলে লাগবে অনেকটাই খোলামেলা। দেয়ালে ওয়ালপেপার বা হাল্কাশেডের উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করতে পারেন। অন্য সব ঘরের মত এখানেও রাখতে হবে প্রচুর আলোর ব্যবস্থা।

শোয়ার ঘর

শোয়ার ঘরে আলগা আসবাবপত্র যতটা সম্ভব কম রাখুন। বিছানা থেকে কেবিনেট রাখুন সঠিক দূরত্বে। ছোট পরিসরের বাসার ক্ষেত্রে স্থান সংকট বেশি তাই কম্পোজিট স্টাইলকে প্রাধান্য দিতে হবে যেন একই ফার্নিচারকেই আপনি একাধিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন শোয়ার ঘরের কেবিনেটের সাথেই ড্রেসিং টেবিল রাখতে পারেন যেন আলাদা জায়গা না নেয়। কেবিনেটের ভেতর প্রচুর ইউটিলিটি স্পেস রাখতে হবে যাতে কাপড় চোপড় ছাড়াও টুকিটাকি অনেক কিছুই রাখতে পারেন। আর বিছানা ছাড়া মেঝেতে শতরঞ্জি আর কুশন দিয়ে তৈরী করতে পারেন বসার জায়গা।

বাচ্চার ঘর

আপনার বাচ্চা যদি হয় ছোট সেক্ষেত্রে রুমটাকে সাজিয়ে ফেলুন খুবই উপভোগ্য করে। দেয়ালে ব্যবহার করুন উজ্জ্বল রঙ, মজাদার কার্টুন স্টিকার দিয়ে সাজাতে পারেন দেয়াল, আর আলো ফেলে দেয়ালকে হাইলাইট করে পারেন। শিশুর ঘরের ছাদও সাজাতে পারেন স্টিকার দিয়ে। শিশুকে যদি ক্রিবে রাখা হয় তাহলে ক্রিবটি রাখুন ঘরের মাঝখানে যেন চারপাশে চলাচল করেই আপনার সোনামণির পরিচর্যা করতে পারেন। শিশুর ঘরেও আলাদা কেবিনেট রাখুন শিশুর জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে। আপনার বাচ্চা স্কুলগামী হলে তার ঘরে পড়াশোনার জন্য টেবিল চেয়ারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কেবিনেটের একটা অংশকেই বানিয়ে ফেলুন পড়ার টেবিল, এতে বাড়তি জায়গা লাগবে না। টেবিলে আলোর ব্যবস্থা রাখুন। কেবিনেটে বাচ্চার জামাকাপড়, বইপত্র এবং খেলনা সামগ্রী রাখুন আলাদা করে।



মন্তব্য চালু নেই