ছোট শিশুরাই লালন করছে কোরবানির পশু

সকাল সাড়ে ৬টা। কাঁটাবন মার্কেটের সামনে একটি বাড়ির সামনের ফুটপাতে জামা-জুতো পায়ে দাঁড়িয়ে আছে তিনজন ক্ষুদে শিশু। ওদের বয়স খুব বড় জোর তিন থেকে পাঁচ বছর। ওদের সামনে লাল রংয়ের কয়েকটি প্লাস্টিকের বালতি ও বোল।

রাস্তায় পাশে পার্ক করা একটি প্রাইভেটকার থেকে চালক গলা বাড়িয়ে উঁচু গলায় বললেন, তোমরা যাও, গরু দেখতে সকালে উঠছো ভালো কথা এখনো বাসায় যাও। এসময় ওই তিনজন এক সঙ্গে কোরাস ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে জানান দিল, তারা গরু দেখতে এখানেই থাকবে।

রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা মোতাহার হোসেনের স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়ে নিলয় ও তনয়। এমনিতে স্কুলে যাওয়ার জন্য ভোর বেলা ঘুম থেকে ডেকে তুললে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। কিন্তু রোববার রাতে গরু কেনার পর তাদের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মোতাহার হোসেন জানালেন, তার বাসা চারতলায়। সকাল থেকে ছেলে-মেয়ে দুটি কতবার যে ওঠানামা করেছে গুনে শেষ করা যাবে না। একেকবার এসে অমুকের গরুটা দুষ্টু, অমুক গরুটা লাল, অমুক গরু অমুক গরুর ঘাস খেয়ে ফেলেছে , আমাদের গরুটা পানি খাচ্ছে না ইত্যাদি কত কথা যে বলছে।

মোতাহার হোসেন জানালেন, বাজেট ছিল ৮০ হাজার টাকা কিন্তু ছেলে-মেয়ের শখ পূরণ করতে গিয়ে লাখ টাকা গরু কিনতে এক রকম বাধ্য হয়েছেন।

এ দুটি দৃশ্য গোটা রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার প্রতিবিম্ব। ইট-পাথরের চার দেয়ালে বন্দি নগরীর শিশুরা এমনিতে ফ্ল্যাট বা বাড়ির চৌহদ্দীর বাইরে বের হতে অনুমতি পায় না। তাই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু দেখতে তারা অনুমতি পেয়েছে। আর তাইতো মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক।

তারা একদিনের জন্য ক্ষুদে রাখালে পরিণত হয়েছে। কেউ ঘাস, কেউ খড় আবার কেউবা পানি খাওয়ানোতে ব্যস্ত থাকছে। শিশুরা নিজেদের মতো করে গরুকে বিভিন্ন নামে ডাকছে। কোনো কোনো শিশু গরু-ছাগলকে এখনো কেন গোসল করানো হচ্ছে সে সম্পর্কে বাবা-মার কাছে কৈফিয়ত চাইছে।

এসব দৃশ্য দেখে শিশুদের বাবা-মায়েরা মুচকি হেসে একে অপরকে বলছেন, ক্ষুদে রাখালরা তো কোরবানির পশুর ভালোই যত্ন করছে।



মন্তব্য চালু নেই