ছয় মাসে টিকিট বিক্রি ১৬৪টি তবুও চলে আন্তঃনগর ট্রেন

কোনো দিন একটি টিকিট বিক্রি হয়, আবার কোনো দিন হয় না। গত ছয় মাসে টিকিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৬৪টি। এ অবস্থা রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ ঘাট রেলপথে চলাচলকারী কালুখালী ভাটিয়াপাড়া নামের আন্তঃনগর এক্সপ্রেসটির। চালু হওয়ার পর থেকে গত তিন বছর ধরে একই দশা হলেও ট্রেনটির রুট পরিবর্তন করা হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, ট্রেনটির রুট পরিবর্তনের। রেল কর্তৃপক্ষও এ দাবির প্রতি মত পোষণ করেছে।

১৭ বছর পর ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রুটে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কালুখালী ভাটিয়াপাড়া আন্তঃনগর এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন চলাচল করে এ রুটে। ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়ে গিয়ে আবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ফিরে আসে রাজবাড়ীতে। বিকেল সোয়া ৫টায় এ ট্রেনটি গোয়ালন্দ ঘাটে যায় অনেকটা যাত্রীবিহীন। ফিরে আসার সময়ও বিরাজ করে একই অবস্থা। রেল কর্মকর্তারা জানান, কালুখালী ভাটিয়াপাড়া আন্তঃনগর এক্সপ্রেসসহ মোট পাঁচটি ট্রেন গোয়ালন্দ ঘাট রুটে যাতায়াত করে। ভোর ৬টায় শাটল ট্রেন, সকাল ১০টায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন, দুপুর ১২টায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর মধুমতি ট্রেন এবং দুপুর আড়াইটায় কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে শাটল ট্রেন গোয়ালন্দ ঘাট গিয়ে আবার ফিরে আসে। কিন্তু অন্য ট্রেনগুলো যাত্রীতে ঠাসা থাকে। শুধু এই ট্রেনটিতেই যাত্রী একেবারেই হয় না।

পাঁচটি বগি নিয়ে ট্রেনটি ছেড়ে যায় রাজবাড়ী থেকে। যাত্রী থাক বা না থাক ট্রেনটিতে দায়িত্ব পালন করতে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকেন অন্তত ১১ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন গার্ড, একজন চালক, একজন সহকারী চালক, তিনজন অ্যাটেনডেন্ট, ইলেকট্রিশিয়ান একজন, পাওয়ার কারচালক একজন এবং জিআরপি তিনজন। রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ ঘাট ২০ কিলোমিটার রেলপথে মাঝখানে পাঁচুরিয়া ও গোয়ালন্দ রেলস্টেশন রয়েছে। কিন্তু আন্তঃনগর ট্রেন হওয়ার কারণে স্টেশন দুটিতে ট্রেন থামে না। রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে এ বছরের শুরু থেকে ৮ জুন পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৬৪টি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৪৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪৬টি, মার্চে ৩৭টি, এপ্রিলে ৩১টি, মে মাসে ২৫টি ও ৮ জুন পর্যন্ত ৮টি। হিসাবে প্রতিদিন গড়ে একটি টিকিটও বিক্রি হয়নি। প্রতি টিকিট ৪৭ টাকা হিসাবে বিক্রি হয়েছে মাত্র সাত হাজার ৭০৮ টাকা। গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রির পরিমাণ আরও খারাপ। জানা গেছে, রেলের আপ-ডাউনে অন্তত ৫০ লিটার তেল খরচ হয়। অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই।

এ বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত রাজবাড়ী রেলওয়ের লোকোফোরম্যান আবদুল খালেক মণ্ডল জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিএমওর অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না।

রাজবাড়ী রেলওয়ের জুনিয়র ইন্সপেক্টর অব টিটিইজ গোলাম মোস্তফা বলেন, মাঝে মধ্যেই আমাকে ট্রেনটিতে দায়িত্ব পালন করতে যেতে হয়। কিন্তু যাত্রী একেবারেই থাকে না। ট্রেনটির রুট পরিবর্তন করে যদি ফরিদপুর রুটে চালানো যেত তাহলে যাত্রী অনেক বেশি হতো, সরকারেরও রাজস্ব আয় হতো অনেক বেশি।

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি একাধিকবার জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা শওকত জামিল মোহসী বলেন, সবই আমরা জানি। আমাদের অজানা কিছু নেই। রেল একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। লোকসান দিয়ে জনগণকে সেবা দেওয়াই রেলের কাজ। লাভ-লোকসানের হিসাব পরে। তবে নতুন টাইম-টেবিলে রুটটি পরিবর্তন করা হতে পারে। তিনি বলেন, তেল খরচ, ইলেকট্রিক খরচ, স্টাফ বেতনসহ অনেক খরচ আছে। খরচ বের করা খুব কঠিন।



মন্তব্য চালু নেই