জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে পাশে থাকতে চায় ‍যুক্তরাষ্ট্র

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। সকালে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান।

৯ ঘণ্টার সফরে সকাল সোয়া দশটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন জন কেরি। সেখান থেকে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতা, নিরাপত্তা ইস্যু, মানবাধিকার প্রসঙ্গ নিয়ে দুটি বৈঠকেই আলোচনা হয়। কথা হয় জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন জন কেরি। তার সফরে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে এটা আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি এ বিষয়ে কেরি নতুন প্রস্তাব দেবেন বলেও জানিয়েছিলেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট।

আর্টিজান হামলায় জড়িত সবাইকে পরদিনই হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এই হামলায় মূল হোতা হিসেবে শনাক্ত তামিম চৌধুরী ও তার দুই অনুচর নারায়ণগঞ্জে ‍পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছেন। এর আগে কল্যাণপুর অভিযানে নিহত হয়েছে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি। এ ছাড়াও গত এক মাসে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে বহু জঙ্গির প্রাণহানি ঘটেছে।

বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রস্তাব

বেলা সোয়া ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেন জন কেরি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় জঙ্গিবিরোধী লড়াই প্রসঙ্গ। বৈঠক শেষে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

প্রধানমন্ত্রী প্রেস সচিব বলেন, ‘জন কেরি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ আছে। আমরা সহযোগিতা করতে চাই।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছি, জনগণ আমাদের সহযোগিতা করছে। ধর্মীয় নেতারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে কাজ করছেন।’

সন্ত্রাস বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে জন কেরিকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত। তাদের কাছে অনেক তথ্য আসে। তারা সে তথ্য দিলে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ধরতে সুবিধা হবে।

বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা চলছে

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানতে পেরেছে সরকার। তাকে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, এ বিষয়টি পর্যালোচনার পর্যারয়ে আছে।

সন্ত্রাস ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, জ্বালানিসহ অন্য অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এক সঙ্গে কাজ করার কথা জানান জন কেরি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আহ্বান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্ত্র ছাড়া সকল পণ্যের বাংলাদেশি পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি প্রবেশের সুযোগও চান তিনি।

সব কথা প্রকাশ্যে বলা যায় নাকি?

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন জন কেরি। বৈঠক শেষে এ নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর খুনিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জন কেরি বলেছেন, তিনি দেশে ফিরে গিয়ে এ নিয়ে আলোচনা করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দুই পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রশংসা করেছেন তিনি। পাশাপাশি এ বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতা কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সে নিয়ে কথা হয়েছে দুই পক্ষে।

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দিয়েছ কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো সব কিছু প্রকাশ্যে বলা যায় নাকি? আলোচনা চলছে, আরও চলবে, ধন্যবাদ।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও ১৯৭১ সালে তাদের দেশে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বাংলাদেশের পক্ষেই ছিলেন। অনেক রাজনীতিবিদ ও সিনেটরও বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন। জন কেরি তখন সিনেটর ছিলেন না, কিন্তু তিনি সে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাবশিষ্য ছিলেন। কেনেডি ছিলেন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তিনি সে কথা বলেছেন।



মন্তব্য চালু নেই