জঙ্গির চিঠি : মিতু হত্যা তদন্তে নতুন মোড়

চট্টগ্রাম কারাগারে আটক এক জঙ্গির চিঠির সূত্র ধরে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। রহস্য উন্মোচনে নতুন ক্লু নিয়ে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন এবং ডিসি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে মিতু হত্যার মনিটরিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এই হত্যা মামলাটি নতুন করে গতি এসেছে বলে মনে করছে ডিবি।খবর: দ্য রিপোর্ট

বাবুল আক্তারসহ জঙ্গি অভিযানে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যার নির্দেশনা দিয়ে কারাগারে বন্দি বুলবুল নামের এক জঙ্গী সদস্যের পাঠানো একটি চিঠির সূত্র ধরে পুলিশ মনে করছে জঙ্গিরা বাবুল আক্তারকে হত্যা করতে না পেরে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। এই চিরকুটের লেখক বাবুল আক্তারের হাতে গ্রেফতারকৃত জঙ্গী সদস্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি বুলবুলকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে মিত্যু হত্যা মামলার তদন্ত দল।

মিতু হত্যায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিতু হত্যা মামলাটি এখন নতুন করে গতি পেয়েছে। আমরা শিগগির বড় কোনো সাফল্য দেখাতে সক্ষম হবো।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত মাসে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জঙ্গিদের কাছে পাঠানো একটি বিশেষ চিরকুট নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই চিরকুটে কারাগারে বন্দি বুলবুল নামের এক জঙ্গি সদস্য তাদের ওপর নির্যাতনের কাহিনী এবং জঙ্গি নেতা জাবেদকে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করার কথা উল্লেখ করে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিরকুটটি বের হয়ে বিভিন্ন হাত ঘুরে এটি নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতেও এসেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এই চিরকুটের নির্দেশনায় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে কিনা তা অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ।

গত বছর ৫ অক্টোবর নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজ নগর এলাকা থেকে বুলবুলসহ ৫ জঙ্গি সদস্যকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গ্রেনেড ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার করেছিলেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। ওই সময় গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে ছিল- মো. জাবেদ (২৪), ফুয়াদ ওরফে মো. বুলবুল (২৬), সুজন ওরফে বাবু (২৫), মাহবুব (৩৫) এবং সোহেল ওরফে কাজল (৩৫)।

খোয়াজ নগরের ওই অভিযানের সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাবুল আক্তারকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু এদিন তিনি প্রাণে রক্ষা পান। গ্রেফতার করা ৫ জঙ্গির মধ্যে জঙ্গি নেতা জাবেদ পরদিন ভোরে পুলিশের অস্ত্র ও গ্রেনেড উদ্ধার অভিযানে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়ে নিহত হয়।

মিতু হত্যাকাণ্ডের নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) কামরুজ্জামান বলেন, ‘মিতু হত্যার রহস্য উন্মোচনে আমরা সম্ভাব্য সব দিক অনুসন্ধান করে দেখছি। এর মধ্যে কারাগারে বন্দি কোনো জঙ্গির নির্দেশনা বাইরের জঙ্গিরা বাস্তবায়ন করেছে কিনা, বা এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

কারাগারের বিশেষ চিরকুট বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও সিনিয়র এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কারাগারে বন্দি জঙ্গি সদস্য বুলবুলকে বাকলিয়া থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে বুলবুলের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বুলবুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যায় কারাগার থেকে কোনো নির্দেশনা গিয়েছিল কিনা তা জানা যাবে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, কারাগারে বন্দি জঙ্গি সদস্য বুলবুলকে বাকলিয়া থানার একটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৪ জুন) এ ব্যাপারে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই